বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিয়েছে কম্বোডিয়া। বিশেষ করে বাংলাদেশে তৈরি উচ্চমানের প্রযুক্তিপণ্য নিতে আগ্রহী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের শীর্ষ ব্র্যান্ড ওয়ালটন। এজন্য ওয়ালটনের সঙ্গে কম্বোডিয়ান সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি ২০২০) রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলে কম্বোডিয়ার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ওই বৈঠক হয়। কম্বোডিয়ার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী কান চ্যানমেতার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব úোস্ট, টেলিকমিউনিকেশনস অ্যান্ড আইসিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট হেন স্যামবওয়েন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ভ্যাট চুন এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগের মহাপরিচালক তোল ন্যাক।
বাংলাদেশের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যেগে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব মো. মনির হোসেন।
ওয়ালটনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক ব্যবসা ইউনিট (আইবিইউ) প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম, কম্পিউটার বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লিয়াকত আলী, সিনিয়র অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর আব্দুর রউফ এবং ডেপুটি ডিরেক্টর অগাস্টিন সুজন।
বৈঠকের শুরুতে কম্বোডিয়ার প্রতিনিধিদল ওয়ালটনের অত্যাধুনিক কারখানায় আন্তর্জাতিকমানের রেফ্রিজারেটর, কম্প্রেসর, এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশন, ল্যাপটপ-কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র উপভোগ করেন।
এ সময় এডওয়ার্ড কিম বলেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫টিরও বেশি দেশে ওয়ালটন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ওয়ালটনের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি ব্র্যান্ডের কাতারে যাওয়া। এজন্য বর্হিবিশ্বে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের বিজনেস ভলিউম বাড়াতে জোরোসোরে কাজ চলছে। ওয়ালটন পণ্যের ডিজাইন, উৎপাদন এবং বিশ্বব্যাপী বিপণন নিয়ে কাজ করছেন ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। উৎপাদন প্রক্রিয়া, গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএনডি), মান নিয়ন্ত্রণ বা কোয়ালিটি কন্ট্রোলসহ বিভিন্ন বিভাগে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি।
লিয়াকত আলী বলেন, ইতোমধ্যেই ওয়ালটন বাংলাদেশের বাজারে শীর্ষে রয়েছে। এখন ওয়ালটনের লক্ষ্য বৈশ্বিক বাজার। এক্ষেত্রে ওয়ালটনের বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) পার্টনার হতে পারে কম্বোডিয়া।
তিনি জানান, ইউরোপসহ অন্যান্য উন্নত দেশে ওয়ালটন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার ব্র্যান্ড হুন্দাই এবং ভারতের রিলায়েন্সের সঙ্গে চুক্তি করেছে ওয়ালটন। এর ফলে প্রতিষ্ঠানদুটিতে বিপুল পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করবে ওয়ালটন। এছাড়া বিশ্বের শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের মাধ্যমে উত্তর আমেরিকায় যাচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি ওয়ালটন পণ্য।
কান চ্যানমেতা বলেন, আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে কম্বোডিয়া হতে পারে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ক্ষেত্র। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে স্টার্টআপ সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং সাইবার আকাশের সুরক্ষায় কাজ করার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। পাশাপাশি বিটুবি পদ্ধতিতে ওয়ালটনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
তিনি কম্বোডিয়ার স্পেশাল ইকোনমিক জোন-এ ওয়ালটনকে কারখানা স্থাপনের আমন্ত্রণ জানান। এক্ষেত্রে কম্বোডিয়ার সরকার ওয়ালটনকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে উল্লেখ করেন।
কান চ্যানমেতা জানান, আগামি ২০ থেকে ২২ মার্চ কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডিজিটাল মেলা। এতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে তৈরি ওয়ালটনের বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শনের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
ওয়ালটনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরিতে খুব শিগগিরই আবার বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান কম্বোডিয়ার প্রতিমন্ত্রী। সেসময় কম্বোডিয়ার ব্যবসায়িদের নিয়ে ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।