বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ইস্যু ও জনবিক্ষোভ দমনে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের প্রবণতা বাড়ছে। ২০১৯ সালে এক বছর আগের চেয়ে ৪০ শতাংশের বেশি দেশ ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। বিশেষত নির্বাচনকালীন এবং নাগরিক অশান্তির সময় অবাধ তথ্যের প্রবাহ এবং ভিন্নমত নিয়ন্ত্রণে ইন্টারনেটকে দমন-পীড়নের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজিটাল রাইটস অর্গানাইজেশন অ্যাকসেস নাউয়ের প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর ভাইস নিউজ।
অ্যাকসেস নাউয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বের ৩৫টি দেশে অসংখ্যবার ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশগুলোর সরকারের সংক্ষিপ্ত নির্দেশে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের এসব ঘটনা ঘটে। অথচ ২০১৮ সালে বিশ্বের ২৫টি দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে দেখা গেছে।
গত বছর কিছু ক্ষেত্রে পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ব্ল্যাকআউট করে রাখা হয়েছিল। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফেসবুকের মতো নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছিল। যখন-তখন ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ভয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি করছে, যা সাধারণ মানুষ এবং গণমাধ্যমের পক্ষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন করা কঠিন করে তোলে।
ডিজিটাল রাইটস গ্রুপ নেটব্লকস ডটঅর্গের পরিচালক অ্যাল্প টোকার বলেন, তারা গত বছর বেশকিছু হেনস্তাজনক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। বিভিন্ন বিক্ষোভে প্রাণহানি ও হত্যার মতো বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে অনেক দেশের সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। ইরান ও সুদানে এমন ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। দেশ দুটিতে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়। উভয় দেশে এসব সমালোচিত ঘটনা চাপা দিতে সংক্ষিপ্ত নির্দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়।
অ্যাকসেস নাউয়ের জ্যেষ্ঠ পলিসি বিশ্লেষক বারহান তায়ে বলেন, গত বছর একাধিক ইন্টারনেট ফ্রিডম গ্রুপ দীর্ঘস্থায়ী ইন্টারনেট সেবা বন্ধের একাধিক ঘটনা ট্র্যাক করেছে। এর আগে একদিন, এক সপ্তাহ কিংবা দুই সপ্তাহের জন্য ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার ঘটনা দেখা গেছে, যা অনেক দীর্ঘ সময়। তবে গত বছর একটানা ১২০ দিন কিংবা ১৫০ দিন পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নজির দেখা গেছে। এটা অনেক বিপজ্জনক এবং উদ্বেগের বিষয় ছিল।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পর উত্তর মিয়ানমারের মোট নয়টি জনপদ পুরোপুরি ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে পরিণত হয়েছিল। এছাড়া দেশটির চারটি জনপদে এখনো ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন রয়েছে, যা ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে।
অন্যদিকে অ্যাল্প টোকার বলেন, বিশ্বজুড়ে চলতি বছর আরো বেশি পরিকল্পিত ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা দেখা যাবে। বিশ্বব্যাপী পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা মানুষের যোগাযোগে আরো দ্রুতগতি এনেছে। যে কারণে বিভিন্ন দেশের সরকার ইন্টারনেটের প্রতি আরো বেশি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।