প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার গুগলের কাছে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে অনুরোধ পাঠায়। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যভান্ডার গুগল এত দিন এসব অনুরোধ আমলে নিয়ে যতটা সম্ভব তথ্য সরবরাহের চেষ্টা করেছে। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তারা কোনো ফি নেয়নি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই তথ্য চাওয়ার হার বেড়ে যাওয়ায় এখন নতুন করে ফি বসানো শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে ২৪ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে আসা অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য সরবরাহের জন্য গুগল এখন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি নেবে। চলতি মাস থেকেই তথ্যে বিনিময়ে ফি গ্রহণের কাজটি শুরু করে গুগল।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই বিভিন্ন তথ্যের অনুরোধ আসে গুগলের কাছে। এর মধ্যে ই-মেইলের তথ্য থেকে শুরু করে ব্যবহারকারী–সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনকি ব্যবহারকারীর অবস্থান জানতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে অনুরোধ আসে তাদের কাছে। সময়ের সঙ্গে এমন অনুরোধের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে গুগল এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কিছু ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে।
গুগল নির্ধারিত ফি শুরু হয়েছে ৪৫ ডলার থেকে। সাধারণ শমনের তথ্যের জন্য এই ফি পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া ওয়্যার ট্যাপের জন্য পরিশোধ করতে হবে ৬০ ডলার। আর একটি পূর্ণাঙ্গ সার্চ ওয়ারেন্টের জন্য গুনতে হবে ২৪৫ ডলার। এরই মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির তথ্যের জন্য নির্ধারিত ফি উল্লেখ করে একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দপ্তরে।
এ বিষয়ে গুগলের মুখপাত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, বিভিন্ন ধরনের শমন ও পরোয়ানায় চাওয়া তথ্য জোগাড়ে যে ব্যয় হয়, তা কিছুটা পুষিয়ে নিতেই এ ফি ধার্য করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন অনুযায়ী, সরকারি প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার জন্য ব্যয়িত অর্থ পরিশোধের জন্য এ ধরনের ফি নির্ধারণের এখতিয়ার কোম্পানিগুলোকে দেওয়া আছে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের আইন নেই। ফলে এটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আইনি অনুরোধে সাড়া দেওয়ার ধরনে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত গুগল নিজেদের এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জানিয়ে দিল।
গুগলসহ সিলিকন ভ্যালির বহু কোম্পানিই বহু বছর ধরে এ ধরনের ফি নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। ২০০৮ সালের দিকে গুগল ফির বিনিময়ে তথ্য সরবরাহ করত সরকারগুলোকে। কিন্তু পরে এই ফি নেওয়ার রেওয়াজ তুলে দেওয়া হয়েছিল। মূলত, ফি নিলে সরকারি কাজে ‘অসহযোগিতার’ মতো নেতিবাচক তকমা লেগে যাওয়া এবং এভাবে গৃহীত ফি সমন্বয় করা নিয়ে জটিলতার কারণেই কোম্পানিগুলো এ পথ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এ ধরনের অনুরোধের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গুগল তার পুরোনো অবস্থানে ফিরে গেল। শুধু গত বছরই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সরকার গুগলের কাছে তার ১ লাখ ৬৫ হাজার ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে অনুরোধ পাঠায়। এই অনুরোধগুলোর এক-তৃতীয়াংশই যুক্তরাষ্ট্রের।
এত বেশিসংখ্যক অনুরোধ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গুগলের বেশ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। নতুন ফির মাধ্যমে ওই ব্যয়ের একটি অংশই কেবল পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর হয়ে বহু বছর আইনজীবী হিসেবে কাজ করা এবং বর্তমানে স্ট্যানফোর্ড’স সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির পরিচালক আল গিদারি। তাঁর মতে, এই ফি ধার্যের ফলে তথ্য চেয়ে করা অনুরোধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। বিশেষত ওয়্যার ট্যাপ ও সার্চ ওয়ারেন্টের বিপরীতে সাড়া দিতে বেশ অর্থ ব্যয় হয়। এ ক্ষেত্রে ফি ধার্যের কারণে মানুষের ওপর সরকারি নজরদারিও কিছুটা কমে আসবে।
এ বিষয়ে সরকারি কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য বলছেন, এই ফি ধার্য করার মধ্য দিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাজ কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষত, যেসব সংস্থার আর্থিক সংগতি কম, তারা আইনি পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে বিপাকে পড়বে। কারণ, গুগলের পথ অনুসরণ করে অন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও অচিরেই এমন ফি ধার্য করবে।