শ্লথগতি ও ঋণ সংকটের কারণে দীপ্তি হারিয়েছে ভারতের অর্থনীতি। তবে এ সংকটের মাঝেও উজ্জ্বলতা বাড়ছে দেশটির মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট রফতানি খাতের। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারত ২৫০ কোটি ডলারের (১৭ হাজার কোটি রুপি) মোবাইল ফোন রফতানি করেছে। খবর টিএনএন।
বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভারতে সংযোজন ইউনিট স্থাপনের কারণে রফতানিতে এ উত্থান দেখা গেছে। ভারত থেকে মোবাইল রফতানিকারকদের তালিকায় অ্যাপলের মতো বিদেশী ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে লাভা ও কারবনের মতো স্থানীয় ব্র্যান্ডও জায়গা করে নিয়েছে।
এ খাতের সঙ্গে যুক্ত নির্বাহীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য বিরোধে লাভবান হয়েছে ভারত। বাণিজ্য বিরোধে বাড়তি শুল্কের তোপে পড়ার ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ভারতে উৎপাদন কার্যক্রম সরিয়ে নিয়েছে। উষ্ণ সম্পর্কের বদৌলতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধ তৈরির আশঙ্কা কম। তাছাড়া ভারতে মজুরিও কম লাগে। এসব কারণে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো এখন ভারতে নজর দিচ্ছে।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ভারতের সরকারও মেক ইন ইন্ডিয়া নামের প্রোগ্রাম চালু করেছে। তাছাড়া দেশটিতে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এতে চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশে প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়ে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো ভারতে উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। তবে অসুবিধা হলো, ভারতে রফতানি প্রণোদনা ৪ শতাংশ কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। তারপরও কোম্পানিগুলো সরকারের কাছ থেকে আরো সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
ইন্ডিয়া সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান পঙ্কজ মাহিন্দ্র বলেন, মেক ইন ইন্ডিয়া এবং রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ কাজে দিয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি ৮০০ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৫০০ রুপিতে পৌঁছেছে। রফতানির গতি খুব শক্তিশালী আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি রুপি রফতানি হবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি বলেন, এটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে উৎপাদন ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠা এবং উৎপাদনের জন্য নতুন বিনিয়োগ মেক ইন ইন্ডিয়ার আওতাভুক্ত পণ্যের লাইনআপকে শক্তিশালী করবে।
ভারত থেকে রফতানি হওয়া অর্ধেক মোবাইল ফোনের গন্তব্য সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারত দেশটিতে ১৩০ কোটি ডলার মূল্যের মোবাইল রফতানি করেছে, যা ২০১৮ সালের চেয়ে ১৭৫ শতাংশ বেশি। ভারত থেকে হ্যান্ডসেট আমদানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে আছে রাশিয়া। দেশটিতে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের মোবাইল রফতানি করেছে ভারত। ১৪ কোটি ৪০ লাখ রফতানির বদৌলতে এ তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারত ৭৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের মোবাইল রফতানি করেছিল।
রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও মোবাইলের চাহিদা বাড়ছে। এর সুবাদে বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন বাজার হয়ে উঠেছে দেশটি। এ কারণে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ভারতে নতুন করে অবকাঠামো গড়ে তুলছে বিভিন্ন বৈশ্বিক ব্র্যান্ড।
অ্যাপলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ফক্সকন ভারতে নতুন করে ১ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চেন্নাই প্লান্টে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়তে তাইওয়ানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি এ অর্থ বিনিয়োগ করবে। ফক্সকন ভারতে আইফোন সেভেন ও টেনআরের মতো কিছু ডিভাইস তৈরি করে থাকে, যার মধ্যে কয়েকটি বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে রফতানি হয়।
চীনের বিবিকে গ্রুপের মালিকাধীন ওয়ানপ্লাস নয়ডা কারখানায় উৎপাদিত ফাইভজি ফোন উত্তর আমেরিকায় রফতানি করছে। হায়দরাবাদে প্রতিষ্ঠানটির একটি আরঅ্যান্ডডি সেন্টারও রয়েছে।
ভারতের নয়ডায় একটি ডিসপ্লে তৈরির প্লান্ট স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে স্যামসাংয়ের ভারতীয় শাখা। ৩ জানুয়ারি ভারতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা রেজিস্ট্রারার অব কোম্পানিজে (আরওসি) জমা দেয়া নথি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানিটি ডিসপ্লে তৈরির প্লান্ট স্থাপনে সাড়ে ৩ হাজার কোটি রুপি (৫০ কোটি ডলার) অর্থ বিনিয়োগ করছে। এ প্লান্টে স্মার্টফোনের পাশাপাশি অন্যান্য ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের ডিসপ্লেও তৈরি করা হবে। ভারতের বাজার ধরতে ২০১৮ সালে স্যামসাং নয়াদিল্লির স্যাটেলাইট সিটি নয়ডায় এ স্মার্টফোন কারখানাটি চালু করে। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে, এটি বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল প্রস্তুতকারক প্লান্ট। কারখানাটির জন্য ৭০ কোটি ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
লাভা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান হরি ওম রায় বলেন, ভারতে বৃহত্তর পরিসরের উৎপাদন অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে।