কানাডাভিত্তিক একসময়ের জনপ্রিয় মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড ব্ল্যাকবেরির কথা মনে আছে নিশ্চয়? বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডটির ফোনের বেশ কদর ছিল। তবে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস ফোনের উত্থানে ব্ল্যাকবেরি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এখন বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ব্ল্যাকবেরি ব্র্যান্ড অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংকটে পড়েছে। ব্র্যান্ডটির চুক্তিভিত্তিক ফোন প্রস্তুতকারক চীনভিত্তিক টিসিএল কমিউনিকেশন টেকনোলজি হোল্ডিংস লিমিটেড চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ টিসিএল আর কোনো ব্ল্যাকবেরি ফোন তৈরি করতে চায় না। খবর বিবিসি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিসিএল কবে থেকে ব্ল্যাকবেরি ফোন উৎপাদন বন্ধ করবে, তা নিশ্চিত করা হয়নি। ব্ল্যাকবেরি ফোন ব্যবহারকারীরা ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত টিসিএলের পক্ষ থেকে সফটওয়্যার হালনাগাদ ও অন্যান্য সেবা পাবেন। এরপর ব্ল্যাকবেরি ফোনের জন্য আর কোনো সফটওয়্যার কিংবা নিরাপত্তা সেবা সরবরাহ করবে না প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে ব্ল্যাকবেরি কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। কারণ ব্ল্যাকবেরি কয়েক বছর আগে স্মার্টফোন উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়িয়ে সফটওয়্যার ও সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে এখনো ব্ল্যাকবেরি ফোনের নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক রয়েছেন।
এসব বাজারের কথা বিবেচনা করে তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফোন উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রেখেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল ব্ল্যাকবেরি। ওই সময় ব্ল্যাকবেরি মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে সরে গিয়ে নিরাপত্তা সফটওয়্যার উন্নয়নকারী ও সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। একই বছর টিসিএলের সঙ্গে ব্ল্যাকবেরি ফোন উৎপাদন ও বিক্রির বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হয়। টিসিএলের পাশাপাশি ভারতের দিল্লিকেন্দ্রিক অপ্টিমাস নামে একটি চুক্তিভিত্তিক ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সফটওয়্যার লাইসেন্স, সেবা, অ্যান্ড্রয়েডচালিত ফোন তৈরির জন্য পৃথক আরেকটি চুক্তি করেছিল ব্ল্যাকবেরি। ভারতে অপ্টিমাস ব্ল্যাকবেরি ফোন উৎপাদন এবং বিক্রি অব্যাহত রাখবে। তবে অপ্টিমাস বাংলাদেশ ও ভারতসহ হাতেগোনা কয়েকটি বাজারে ব্ল্যাকবেরির ব্র্যান্ড লাইসেন্স ব্যবহারের সুবিধা পেলেও টিসিএল বৈশ্বিক বাজারের জন্য ব্ল্যাকবেরির ব্র্যান্ড লাইসেন্স ব্যবহার ও ব্র্যান্ডটির ফোন সরবরাহে অনুমোদিত ছিল।
ওই চুক্তি অনুযায়ী, ব্ল্যাকবেরি ব্র্যান্ডের ফোন উৎপাদন করবে টিসিএল এবং সফটওয়্যার সেবা দেবে খোদ ব্ল্যাকবেরি। টিসিএলকে ব্ল্যাকবেরির ব্র্যান্ড লাইসেন্স ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে ফোনের নকশা, উৎপাদন, বিক্রি ও গ্রাহকসেবা দেয়ার অনুমোদন পায় টিসিএল।
টিসিএলের মাধ্যমে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার গত কয়েক বছরে একাধিক অ্যান্ড্রয়েডচালিত ব্ল্যাকবেরি ফোন হাতে পেয়েছে। ডিভাইসগুলোর মধ্যে অন্যতম দুটি হলো ব্ল্যাকবেরি কি১ ও ব্ল্যাকবেরি কি২। উভয় ডিভাইসে ফিজিক্যাল কিপ্যাডের পাশাপাশি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে ছিল। টিসিএল সর্বশেষ ব্ল্যাকবেরি কি২ এলই বাজারে ছেড়েছিল। ২০১৮ সালের আগস্টে ডিভাইসটি উন্মোচন করা হয়। একই বছরের অক্টোবরে ডিভাইসটির সরবরাহ শুরু হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, ‘বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ব্ল্যাকবেরি’ এমন শিরোনামে অনেক প্রতিবেদন হয়েছে। কিন্তু সরাসরি যুক্ত না থাকলেও এতদিন তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে বাজারে স্বল্প পরিসরে হলেও টিকেছিল ব্ল্যাকবেরি। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে টিসিএল ব্ল্যাকবেরি ফোন উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়ালে ব্র্যান্ডটির ভবিষ্যৎ কী হবে? হয়তো ব্ল্যাকবেরি ব্র্যান্ডের আর কোনো নতুন ফোন মিলবে না। টিসিএল ফিজিক্যাল কিপ্যাডসংবলিত অ্যান্ড্রয়েড ফোন উন্মোচন করে ডিভাইস বাজারে সাড়া ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়েছে। বাস্তবিক অর্থে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে কিপ্যাড ব্যবহারের যৌক্তিক কোনো প্রয়োজনীয়তাও নেই। ব্ল্যাকবেরি ব্র্যান্ডের ডিভাইস নিয়ে খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে টিসিএল ব্ল্যাকবেরি ফোন উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়ালেও নকিয়া ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড ও ফিচার ফোন দিয়ে ভালো সাড়া ফেলেছে ফিনল্যান্ডভিত্তিক এইচএমডি গ্লোবাল।