তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করার জন্য যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,‘বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাত যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য।’
জুনাইদ আহমেদ পলক সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
বিগত এক দশকে অনুন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ এ কথা উল্লেখ করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
পলক বলেন,‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব এবং তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুগোপযোগি পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে অভূতপূর্ব এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ সম্ভব হয়েছে।’
বুধবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
‘ইনভেস্টিং ইন ডিজিটাল বাঙলাদেশ : ফিনটেক টু হাইটেক’শীর্ষক এ সেমিনারে যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল, কালচারাল, মিডিয়া এন্ড স্পোর্টস মন্ত্রী ম্যাট ওয়ারম্যান, লর্ড রনবীর সিং সুরি, লর্ড ডেবিড হাওয়েল, লর্ড জিতেস গাডিহা, ভেলিরি ভাজ এমপি, স্টিফেন ম্যাটক্লিপ এমপি ও স্টিফেন টিমস এমপি সহ প্রায় ১৫০ জন ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি-ব্রিটিশ উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশি-ব্রিটিশ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাত সম্পর্কে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে এ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তাদের সব প্রশ্নেরই জবাব দেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক বিশাল দক্ষ কর্মশক্তির উত্থান ঘটেছে। আইসিটি খাতে গত এক-দশকের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন,২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি খাত হিসাবে গড়ে তোলা হবে।
এ জন্য ইতিমধ্যেই সারা দেশে ফাইবার অপটিক লাইন স্থাপন ও দেশের অধিকাংশ এলাকায় ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যেই নাগরিকদের জন্য ৬০০ ই-সার্ভিস চালু হয়েছে। প্রায় ১০ কোটি লোক এখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যাদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ আইটি পেশাজীবী রয়েছে।’
তিনি বলেন, এ ছাড়াও পরিকল্পনা করা হয়েছে ই-গর্ভমেন্টের, স্থাপন করা হয়েছে স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ কোম্পানি এবং ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশী তহবিলের মাধ্যমে বিভিন্ন স্টার্ট-আপ কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ১০০টি স্টার্ট-আপকে বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট দেয়া হবে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এবং ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড আইটি কংগ্রেস অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা উল্লেখ করে তিনি এ দু’টি অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ এবং বাংলাদেশি-ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের আহবান জানান।
যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁরা (ব্যবসায়ীরা) যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সুদৃঢ় বিনিয়োগ সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি উভয় দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন।
লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম এ সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
তিনি যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে তথ্য-প্রযুক্তির রপ্তানির হার মাত্র ১৬ শতাংশ। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে তিনি ব্রিটিশ এবং বাংলাদেশি-ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসারও আহবান জানান।
সাইদা মুনা তাসনীম বঙ্গবন্ধু স্টার্ট-আপ ইনোভেশন গ্র্যান্টের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশি-ব্রিটিশ তরুণ উদ্যোক্তাদের তাদের উদ্ভাবনী স্টার্ট-আপ প্রকল্পের প্রস্তাব আইসিটি বিভাগে পাঠানোর আহবান জানান।
অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুসনে আরা বেগম এবং এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটালের চেয়ারম্যান ইফতি ইসলাম এ সেমিনারে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও সম্ভাবনার ওপর দু’টি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।