২০১২ সালের মার্চে ‘প্লে স্টোর’ সেবা চালু করেছিল গুগল। এরপর অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অ্যাপের প্রধান উৎস হয়ে ওঠে প্লে স্টোর। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপ ডেভেলপাররা প্রতিনিয়ত প্লে স্টোরকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। তবে চীনভিত্তিক ফোন ব্র্যান্ড শাওমি, হুয়াওয়ে, অপো ও ভিভো প্লে স্টোরের আধিপত্য কমাতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে চীনা ফোন ব্র্যান্ডগুলো জোটবদ্ধ হয়েছে। এ জোট চীনের বাইরের অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করছে। যে প্লাটফর্মের মাধ্যমে ডেভেলপাররা চার চীনা ফোন ব্র্যান্ডের অ্যাপ স্টোরের জন্য অ্যাপ জমা দিতে পারবেন।
চীনা ফোন ব্র্যান্ডগুলোর জোটটিকে বলা হচ্ছে ‘গ্লোবাল ডেভেলপার সার্ভিস অ্যালায়েন্স (জিডিএসএ)। এ জোটের আওতায় চারটি ব্র্যান্ডের অ্যাপ স্টোর যৌথভাবে কাজ করবে। এমনকি পৃথক একক অ্যাপ স্টোর হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে। তবে ডেভেলপারদের চারটি ব্র্যান্ডের অ্যাপ স্টোরের জন্য আলাদা করে অ্যাপ উন্নয়ন করতে হবে না। অর্থাৎ ডেভেলপারদের এখন গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের জন্য পৃথক অ্যাপ সংস্করণ উন্নয়ন করতে হয়। এ জটিলতা থেকে মুক্তি দেবে চীনা ফোন ব্র্যান্ডগুলোর জোট।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাং ও অ্যাপল খারাপ সময় পার করলেও চীনা ব্র্যান্ডগুলো ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ৪০ শতাংশের বেশি দখলে নিয়েছে শাওমি, হুয়াওয়ে, ভিভো ও অপোর মতো চীনা ব্র্যান্ডগুলো। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার ভারতে স্যামসাং ও অ্যাপলকে হটিয়ে এরই মধ্যে শীর্ষ অবস্থান দখলে নিয়েছে। এছাড়া স্মার্টফোনের সবচেয়ে বড় বাজার চীনে স্যামসাং ও অ্যাপলের বাজার দখল সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। ভারত ও চীনের পাশাপাশি বিশ্বের অন্য বাজারগুলোতেও চীনভিত্তিক ব্র্যান্ডগুলোর ফোনের চাহিদা বাড়ছে।
চীনা ব্র্যান্ডগুলো ডিভাইস ডিজাইন, উৎপাদন ও সরবরাহে ক্রমান্বয়ে উন্নতি করলে ডিভাইসের অ্যাপ ইকোসিস্টেম গড়তে পিছিয়ে রয়েছে। ডিভাইসের প্রয়োজনীয় অ্যাপের জন্য গুগলনির্ভরশীল থাকতে চাইছে না প্রতিষ্ঠানগুলো।
চীনা ফোন ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব অ্যাপ ইকোসিস্টেম তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে হুয়াওয়ের ফোনে গুগলের জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে নিজস্ব অ্যাপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে গুরুত্ব আরোপ করে প্রতিষ্ঠানটি। পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজস্ব হংমেং অপারেটিং সিস্টেমচালিত স্মার্টফোনও উন্মোচন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে অ্যাপ নিয়ে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জোটবদ্ধ হয়েছে চীনা ফোন ব্র্যান্ডগুলো এবং একটি সম্মিলিত অ্যাপ ইকোসিস্টেম গড়তে কাজ করছে।
এ বিষয়ে শাওমির এক মুখপাত্র জানান, গুগলকে চ্যালেঞ্জ করতে তাদের এ জোট গঠন করা হয়নি। এছাড়া জোটের সঙ্গে হুয়াওয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন। অবশ্য ভিভো ও অপোর পক্ষ থেকে জোটে হুয়াওয়ের থাকা না থাকা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে হুয়াওয়ের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
প্লে স্টোর গুগলের রাজস্ব আয়েরও অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে। সেবাটি চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত অ্যাপ ডেভেলপারদের ৮ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ পরিশোধ করেছে গুগল। সম্প্রতি প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক খতিয়ান প্রকাশের পর টুইটারে এক ঘোষণায় এমন তথ্য জানান গুগলের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিরোশি লকহিমার।
অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসের মতো যেকোনো মোবাইল প্লাটফর্মের মেরুদণ্ড মনে করা হয় তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ডেভেলপারদের। বিভিন্ন মোবাইল প্লাটফর্মকে সমৃদ্ধিশালী করতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্বতন্ত্র অ্যাপ ডেভেলপারদের কোনো বিকল্প নেই। এ ধরনের তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ডেভেলপারদের গুরুত্ব বুঝেই তাদের নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করে আসছে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসের মতো মোবাইল প্লাটফর্মের মালিক প্রতিষ্ঠানগুলো। নিজেদের অ্যাপ ইকোসিস্টেম সমৃদ্ধ করতে চীনা ফোন ব্র্যান্ডগুলোর জোটও তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ডেভেলপারদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।