বৈশ্বিক মেমোরি চিপ বাজার কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে। এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। বহুজাতিক অনেক সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি চীনের উৎপাদন কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ পরিস্থিতিতে মেমোরি চিপ এবং ডিসপ্লে প্যানেলের সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন হলে মেমোরি চিপ এবং ডিসপ্লে প্যানেলের দাম বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোনের মেমোরি চিপ এবং ডিসপ্লে প্যানেলের বৃহৎ উৎপাদক দেশ চীন। দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় উৎপাদন ব্যাহত হবে। বৈশ্বিক মেমোরি চিপ বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং এবং এসকে হাইনিক্স। উভয় প্রতিষ্ঠানেরই উৎপাদন কারখানা চীনে অবস্থিত।
বিবৃতিতে স্যামসাং এবং এসকে হাইনিক্স জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত তাদের মেমোরি চিপ এবং ডিসপ্লে প্যানেলের উৎপাদন কারখানা চালু রেখেছে। উৎপাদন চালু রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাব আরো ব্যাপক আকার ধারণ করলে কারখানা চালু রাখা সম্ভব হবে না। বিদ্যমান পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করলে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। কারণ বাজারে কেমন প্রভাব পড়বে, তার চেয়ে বিপুল সংখ্যক কর্মীর নিরাপত্তা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এরই মধ্যে দেশটিতে নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ স্টোর বন্ধ ঘোষণা করেছে অ্যাপল ও স্যামসাং। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক বৃহৎ প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা ফক্সকন তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে কর্মীদের বাড়িতে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে কর্মীদের বিদেশ ভ্রমণে।
খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় অনেক খাত প্রভাবিত হলেও চিপ উৎপাদনে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ এখন পর্যন্ত চিপ উৎপাদন কারখানাগুলো উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।
স্যামসাং ইলেকট্রনিকস চীনের জিয়ান শহরে একটি এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ কারখানা পরিচালনা করে আসছে, যা করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল উহান থেকে উত্তর-পশ্চিমে ৮০০ কিলোমিটার দূরে। অন্যদিকে এসকে হাইনিক্স চীনের উক্সি এবং চংকিংয়ে দুটি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ কারখানা পরিচালনা করছে। এসকে হাইনিক্সে উভয় কারখানাই করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল উহান থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
লি সিয়াং-উ নামে এক বিশ্লেষক জানান, স্যামসাং এবং এসকে হাইনিক্সের মেমোরি চিপ কারখানাগুলো করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল উহান থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এছাড়া চিপ উৎপাদন মানুষ কর্মীর চেয়ে কারখানার সুযোগ-সুবিধার ওপর বেশি নির্ভর করে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ডফোর্সের পূর্বাভাসেও একই ধরনের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ডিআরএএম এবং এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়বে না। একই সঙ্গে ট্রেন্ডফোর্সের পক্ষ থেকে কারখানা ও কর্মীদের সার্বিক পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষক লি সিয়াং-উ বলেন, উৎপাদন ব্যাহত না হলেও করোনাভাইরাসের কারণে সামগ্রিকভাবে চীনের প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন প্রভাবিত হবে। দেশটিতে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তা গ্রাহকদের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) চীনে স্মার্টফোন সরবরাহ এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ছে। একই সঙ্গে এসব ডিভাইসের জন্য স্টোরেজ মেমোরি চিপের চাহিদা বাড়ছে। মেমোরি চিপ বাজারে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন। এ পরিস্থিতিতে দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব স্থানীয় মেমোরি চিপ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।