বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর বিরুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আচরণের অভিযোগ বাড়ছে। এসব প্রতিষ্ঠান বাজার আধিপত্যের প্রভাব খাটিয়ে তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছিয়ে রেখে অন্যায্য ব্যবসায় সুবিধা নিচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক বৃহৎ প্রযুক্তি জায়ান্টকে ভেঙে ফেলার দাবিও উঠেছে। এবার অ্যালফাবেট নিয়ন্ত্রিত গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপল, ফেসবুক ইনকরপোরেশন এবং মাইক্রোসফট করপোরেশনের কাছে তাদের একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের তথ্য চেয়েছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপে ফেলে অধিগ্রহণের মাধ্যমে বৃহৎ জায়ান্টগুলো অবৈধভাবে কোনো ব্যবসায় সুবিধা নিচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে গত মঙ্গলবার এফটিসির পক্ষ থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
গুগল, ফেসবুক ও অ্যাপলের মতো বহুজাতিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর অপ্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আচরণের অভিযোগ নিয়ে মার্কিন বিচার বিভাগ, এফটিসি, স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল ও হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটি মিলে তদন্ত পরিচালনা করছে। এ তদন্তের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা নিজেদের জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক নানা পণ্য এবং সেবার মাধ্যমে তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের পণ্য ও সেবাগুলোকে পিছিয়ে রাখছে। অবৈধ উপায়ে বাজার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে অপ্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আচরণ করছে। চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিগ্রহণের অভিযোগও রয়েছে অনেক বৃহৎ প্রযুক্তি জায়ান্টের বিরুদ্ধে।
বৈশ্বিক সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকের ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ এবং ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের হোল ফুড অধিগ্রহণ নিয়ে তীব্র সমালোচনা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কৌশলে চাপ সৃষ্টি করে এ দুই প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করে ফেসবুক ও অ্যামাজন। অবশ্য অধিগ্রহণের পর ইনস্টাগ্রামে ফেসবুক এবং হোল ফুডে অ্যামাজন কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা নাটকীয়ভাবে উদীয়মান প্রযুক্তি খাতের দৃশ্যপটে পরিবর্তন এনেছে।
এফটিসির চেয়ারম্যান জোসেফ সাইমনস বলেন, শুরুতে গবেষণাকাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে অসংগতি দেখা গেলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, বৃহৎ প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের তথ্য হাতে পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করা হবে। যদি কোনো অধিগ্রহণ চুক্তি ত্রুটিপূর্ণ চিহ্নিত হয়, সেক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করা হবে। অনেক বৃহৎ প্রতিষ্ঠানই অ্যান্টিট্রাস্ট আইন সঠিকভাবে মানছে না। বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে উদ্বেগ রয়েছে। বৃহৎ প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ বিষয়ে তথ্য চেয়ে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, তা কোনো সতর্ক বার্তা নয়। বিজ্ঞপ্তিটি মূলত অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের বাস্তবায়নের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
এফটিসি-সংশ্লিষ্টদের দাবি, তারা বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ চুক্তি পর্যালোচনা করবে এবং যতটা সম্ভব দ্রুত এ কাজ শেষ করা হবে।
আমেরিকান ইকোনমিক লিবার্টিস প্রজেক্টের রিসার্চ ডিরেক্টর ম্যাট স্টোলার বলেন, সম্পূর্ণ বিষয়টি নির্ভর করছে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো অধিগ্রহণ চুক্তির আড়ালে প্রকৃতপক্ষে কী কার্যক্রম পরিচালনা করছে তার ওপর। বিশ্বের বিভিন্ন খাতে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান দ্বারা তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণের চিত্র নতুন কিছু নয়। এ ধরনের অধিগ্রহণের পেছনে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা থাকাটা জরুরি। অধিগ্রহণের ফলে যদি বাজার প্রতিযোগিতায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, তাহলে তো সমস্যা নেই। উদ্বেগের বিষয় হলো বেশির ভাগ অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার জায়গা ঠিক রাখা হয় না।
একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ বিষয়ে তথ্য চেয়ে এফটিসির বিজ্ঞপ্তি জারি বিষয়ে গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন ও অ্যাপল ইনকরপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
মাইক্রোসফটের এক মুখপাত্র জানান, তারা এফটিসিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার পাশাপাশি একসঙ্গে কাজ করতে চান।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এফটিসির পক্ষ থেকে বৃহৎ মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর কাছে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের তথ্য চাওয়া হয়েছে। বড় অধিগ্রহণগুলো সম্পর্কে জানা গেলেও বৃহৎ প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর অনেক ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্বীকে অধিগ্রহণের তথ্য সচরাচর প্রকাশ্যে আসে না। এ ধরনের অধিগ্রহণগুলো যাচাই করবে এফটিসি।