অবিবাহিত প্রেমিক যুগলদের জন্য হোটেল রুমের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে একাধিক ভারতীয় মোবাইল অ্যাপস। ঘণ্টা চুক্তিতে “কাপল-ফ্রেন্ডলি” হোটেলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে “স্টেআঙ্কল”, “ওয়ো” নামের অ্যাপসগুলো।
যদিও দেশটিতে বিয়ের আগে প্রেম ও ঘনিষ্ঠতাকে সামাজিকভাবে এক ধরনের অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু একদল তরুণ উদ্যোক্তা দীর্ঘদিনের এই সামাজিক প্রথাকে ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে দেশটির তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।
পূজা (ছদ্মনাম) নামে মুম্বাইয়ের এক তরুণী জানান, ২০১৬ সালে বন্ধুর সঙ্গে হোটেল রুম ভাড়া নিতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল।
তিনি বলেন, “আমাদের দু’জনেরই বয়স ছিল আঠারোর বেশি। আমাদেরকে হোটেল রুম ভাড়া না দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না। তবুও তাদের আচরণ ছিল যথেষ্ট বিব্রতকর। শেষপর্যন্ত মিথ্যা তথ্য দিতে হয়েছিল তাদের কাছে।”
উল্লেখ্য, বসবাসের খরচ বেশি হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক প্রথার কারণে ভারতীয় তরুণদের বেশিরভাগই পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। জনবহুল দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে প্রেমিক যুগলদের জন্য তাই ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ খুব কম।
এএফপি’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতেও হোটেলগুলোতে পুলিশ হানা দিয়ে অবিবাহিত যুগলদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে থাকে। আর কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলোতো “পশ্চিমা সংস্কৃতি” আখ্যা দিয়ে ভ্যালেন্টাইন ডে’র অনুষ্ঠানে হামলা চালায়।
এসব সমস্যারই সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছে একাধিক অ্যাপস। আর অ্যাপসগুলোর উদ্যোক্তারাও তরুণ।
স্টেআঙ্কল অ্যাপের উদ্যোক্তা সঞ্চিত শেঠি ব্যবসা শুরু করেন ২০১৬ সালে। তার স্লোগান ছিল- “যুগলদের কক্ষ প্রয়োজন, কটাক্ষ নয়।”
সঞ্চিত শেঠি বলেন, প্রথমদিকে কট্টরপন্থীদের কাছ থেকে হুমকি পেলেও তা ছিল ফোন কলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
এক্ষেত্রে হোটেল মালিকরাও ক্ষেত্রবিশেষে অসহযোগিতা করেন। অনেকেই আবার চিন্তিত থাকেন পুলিশি হয়রানি নিয়ে।
তবে শেষ পর্যন্ত থেমে থাকেনি অ্যাপসগুলোর ব্যবসা। অব্যাহত চাহিদার কারণে অজস্র হোটেল মালিক যুক্ত হয়েছেন তাদের সঙ্গে।
ভারতের ৪৫টি শহরে কেবল স্টেআঙ্কল-এর রেজিস্ট্রার্ড হোটেল সংখ্যাই ৮০০। তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে আরও অন্তত ১৫০০ হোটেলকে তাদের আওতায় আনা। এছাড়া, আরেকটি জনপ্রিয় অ্যাপস লাভস্টে’র আওতাভুক্ত হোটেলের সংখ্যা ৭০০। তাদের পরিকল্পনা আগামী তিন বছরে ২০০০ হোটেলের অন্তর্ভুক্তি।
অ্যাপের পাশাপাশি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের মাধ্যমে যুগলদের ডেটিং টিপসও দিয়ে থাকে স্টেআঙ্কল।
এই ধরনের হোটেল জাপান ও কোরিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। যেখানে প্রেমিক যুগলরা নিজেদের মতো করে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন।