স্মার্টওয়াচের কাছে হেরে যাচ্ছে সুইচ ঘড়ি। তাও গত বছর শুধু অ্যাপল ওয়াচের কাছেই ধরাশায়ী হয়েছে সুইজারল্যান্ডের পুরো ঘড়িশিল্প! এমন তথ্যই দিয়েছে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকস। তারা বলছে, ২০১৯ সালে অ্যাপল ওয়াচ বিক্রি হয়েছে মোট ৩ কোটি ১০ লাখ ইউনিট। সেখানে সুইজারল্যান্ডের সব ব্রান্ড মিলিয়ে বিক্রি করেছে মাত্র ২ কোটি ১০ লাখ ঘড়ি। মধ্যমমানের সুইচ ঘড়ির বিকল্প হিসেবে দাঁড়ানোর কৌশলই অ্যাপলকে এগিয়ে রাখছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে স্মার্টওয়াচের দাপটে সুইচ ঘড়ি শিল্প বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে কি না তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে বলছেন, সুইচ ঘড়ির দিন প্রায় শেষ। বাকিরা বলছেন, সংখ্যায় অ্যাপল ওয়াচ এগিয়ে থাকলেও সুইজারল্যান্ডের সনদপ্রাপ্ত যান্ত্রিক ঘড়ি থেকে রাজস্ব কিন্তু এখনো অ্যাপলের চেয়ে বেশিই।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকসের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক স্টিভেন ওয়ালটার বলেন, অ্যাপল ওয়াচ এখন নিজের মর্যাদার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। তারা মধ্যমমানের সুইচ ঘড়ির বিকল্প প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। অ্যাপলের বিপুল সংখ্যক গ্রাহকভিত্তির মানে হলো আইফোন ব্যবহারকারীদের একটি সামান্য অংশও যদি অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহার করেন তাহলেও সংখ্যাটি কয়েক মিলিয়ন হয়ে যাবে।
প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছে স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকস- অ্যাপল ওয়াচে ফিটনেস ট্র্যাকার এবং সেলফোনে বিভিন্ন অ্যাপের সঙ্গে দ্রুত ও সহজে যুক্ত হওয়ার প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে। এ কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এ ঘড়ি তুমুল জ্নপ্রিয়। বিপরীতপক্ষে অ্যানালগ ঘড়ি বিভিন্ন দেশের মূলত বয়স্করা এখনো পরেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিসের প্রযুক্তি বিশ্লেষক ক্যারোলিনা মিলানেসি বলেন, প্রযুক্তি ও ফ্যাশনের সম্মিলন ঘটাচ্ছে অ্যাপল ওয়াচ। এই সুবিধার জন্যই মানুষ এ স্মার্টওয়াচ কিনছেন। অ্যাপল এখন স্বাস্থ্য ও ফিটনেসের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ কৌশলটিই অ্যাপল ওয়াচকে সুইচ ঘড়ি থেকে এগিয়ে রাখছে। এ ঘড়ি এখনো অলঙ্কার এবং ফ্যাশন পণ্য হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। আর স্বাস্থ্য ও ফিটনেস এখন ফ্যাশন ও গ্ল্যামারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। অ্যাপল বিষয় দুটিকে যেভাবে আয়ত্তে এনেছে অন্যরা তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। তাছাড়া প্রযুক্তি জায়ান্টটি আইফোন, আইপ্যাড এবং অন্যান্য অ্যাপল ব্র্যান্ডের পণ্যের বিশাল ইকোসিস্টেমের সুবিধা পাচ্ছে। সুইচ কোম্পানিগুলো এখন স্মার্টওয়াচও বিক্রি করছে, তবে তারা অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেম ব্যবহার করে।
তাছাড়া অ্যাপলের কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স ভিত্তিক একটি গ্রাহক সম্পর্ক আছেই। এদের বড় একটি অংশ অ্যাপল ওয়াচের গ্রাহক। এমনটাই বলছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান অমডিয়ার গণমাধ্যম ও কনজিউমার প্রযুক্তি বিশ্লেষক ঋষি কাউল। একইভাবে সুইচ ঘড়িপ্রস্তুতকারকরা তাদের স্মার্টওয়াচে ব্যবহার করছে অ্যান্ড্রয়েডভিত্তি অয়্যারওএস। আর এটির গ্রাহক মূলত অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহারকারীরাই।
তবে যাই হোক না কেন, কাজের জিনিস হিসেবে স্মার্টওয়াচের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠলেও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে সুইচ ঘড়ি টিকে থাকবে আরো অনেক দিন। এর মধ্যে বাজার প্রতিযোগিতায় হয়তো এ ঘড়ি তলানিতে চলে যাবে। কিন্তু অদৃশ্য হবে না। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। এ কারণে এ ঘড়িকে অ্যাপল ওয়াচের সঙ্গে তুলনা করতে রাজি নন বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের বিশ্লেষক ভিনসেন্ট থিয়েলকে।
একটি উদাহরণ দিয়ে ভিনসেন্ট বলেন, সুইচ ঘড়ির গড় দাম কিন্তু অ্যাপল ওয়াচের দ্বিগুণ। ফলে টাকার অংকে হিসাব করলে গত বছর অ্যাপল ওয়াচের চেয়ে এগিয়ে ছিল সুইচ ঘড়ি। ফলে শুধু সংখ্যা দিয়ে বিচার করা ঠিক হবে না।