চীনে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আইফোন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যে কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার রাজস্ব আয়ের যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, তা পূরণ সম্ভব হবে না বলে সতর্ক করেছে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আইফোন উৎপাদন ব্যাহত হলেও স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন উৎপাদন এবং সরবরাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ চীনে নিজেদের স্মার্টফোন উৎপাদন কার্যক্রম প্রায় শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনেছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। এ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপল ক্ষতির মুখে পড়লেও প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অ্যাপলের বিবৃতিতে জানানো হয়, চীনভিত্তিক ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের প্রভাব অ্যাপলের আইফোন ব্যবসা বিভাগের ওপরও পড়ছে। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে চীনে আইফোনের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তাদের আগাম পূর্বাভাসের তুলনায় রাজস্ব আয় অনেকাংশে কম হবে। প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করেছে তাদের আইফোন উৎপাদন ও বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী আইফোন সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া হলো। অ্যাপল জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) জন্য আমরা আগে যে রাজস্ব পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, তা পূরণ হবে না। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আইফোন উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। অ্যাপল চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৪ কোটি ১০ লাখ ইউনিট আইফোন উৎপাদনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তা পূরণ সম্ভব হবে না। উৎপাদন বিভ্রাটের কারণে সরবরাহ এবং বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে তা নিশ্চিত নয়। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম আয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করলে অ্যাপল প্রথমে দেশটিতে নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ স্টোর বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে দেশটিতে অ্যাপলের সবগুলো খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সময় কর্মীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অ্যাপল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্বের বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার চীনে তাদের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি দোকানে সীমিত সময়ের জন্য বেচাকেনা শুরু করা হয়েছে। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ বাজারটিতে অ্যাপল পণ্যের বিক্রি অনেক কমেছে। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হুবেই প্রদেশের বাইরে আইফোন উৎপাদনের কারখানাগুলোর অবস্থান। এখন অধিকাংশ কারখানা খোলা হলেও সেখানে উৎপাদন ধীরগতিতে এগোচ্ছে। ধীরে ধীরে খুচরা বিক্রেতা ও অন্য দোকানগুলো খোলা শুরু হলেও নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
গত সপ্তাহে চীনভিত্তিক স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লেই জুন দেশটির স্মার্টফোন শিল্পসংশ্লিষ্টদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশটির অন্যান্য শিল্পের মতো স্মার্টফোন শিল্পের সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেক স্মার্টফোন কারখানার কর্মীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে বিধ্বস্ত হয়ে পড়বে। যে কারণে স্মার্টফোন শিল্পসংশ্লিষ্টদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন লেই জুন।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ডফোর্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রযুক্তিপণ্য বাজারের চিত্র বদলে গেছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীন ও চীনের বাইরে মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যা লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্মার্টফোন উৎপাদন ১২ শতাংশ কমে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ইউনিটে দাঁড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রেন্ডফোর্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিলম্বিত কাজ পুনরায় শুরু, কর্মীদের কাজে যোগদানের অনিশ্চয়তা, চীন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা কারণে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের উৎপাদন এবং সরবরাহে বিলম্ব ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। চীন স্মার্টফোনসহ অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনের প্রধান হাব। করোনাভাইরাসের কারণে দেশটির উৎপাদন খাতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশ্বের বৃহৎ প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো তাদের ডিভাইস উৎপাদনের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল।