এবার টাকা না দিলে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান জহুরুল হক।
বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশের পর নিজ কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, আদালত পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, সোমবারের মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। গ্রামীণফোন সব জায়গায় গেছে। আর কোনো জায়গা নেই। অন্য কোনো সুযোগ নেই। মনে হয় রোববার টাকা দিয়ে দেবে। আর সোমবার বাকি টাকার জন্য আদালত যে আদেশ দেবেন, আমরা সেটাই মানব। গ্রামীণফোন টাকা না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে ১০০০ কোটি টাকা আগামী সোমবারের মধ্যে পরিশোধ করতে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
গ্রামীণফোনের করা রিভিউ আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, এ বিষয়ে সোমবার পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে। সর্বোচ্চ আদালতে বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবে আলম ও খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। গ্রামীণফোনের পক্ষে শুনানি করেন এ এম আমিন উদ্দিন ও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর গ্রামীণফোনকে ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। সে জন্য তাদের দেয়া হয়েছিল তিন মাস সময়, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে।
ওই সময় শেষ হওয়ার আগে বিটিআরসিকে ১০০ কোটি টাকা দিয়ে আলোচনা চালু রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল গ্রামীণফোন। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাতে রাজি হয়নি বলে গত বুধবার জানান গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত।
সে বিষয়টি তুলে ধরে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে রিভিউ শুনানিতে ছয় মাসের কিস্তিতে ওই ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত সোমবারের মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টি সেদিনই পরবর্তী আদেশের জন্য রাখেন।
বিটিআরসি বলে আসছে, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পাশাপাশি রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে দুই অপারেটরকে নোটিশ পাঠায়।
বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর আদালতের দ্বারস্থ হয়। পরে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও তাতে সফলতা আসেনি। গ্রামীণফোনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির নোটিশের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। বিটিআরসি লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ ২৪ নভেম্বর গ্রামীণফোনকে ২ হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেন।
ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য ২৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন (রিভিউ) করে গ্রামীণফোন, যার ওপর শুনানি শেষে আদালত বৃহস্পতিবার ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় দিলেন।