তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেটের উপর আমরা নির্ভরশীল। রান্নাঘরের রেসিপি থেকে শুরু করে বইয়ের পাতা, সবই যেন ইন্টারনেট ভিক্তিক। তবে আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছি তারা কী কখনো ভেবেছি যদি ইন্টারনেট বন্ধ থাকে তাহলে কী ঘটে আমাদের সঙ্গে?
‘একসেস নাউ’ নামের একটি আমেরিকান গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনে জানায়, যখন ইচ্ছা করে ইন্টাররেট সংযোগ বিছিন্ন করে দেয় তখন ব্যবহারকারীর অগোচরেই সমস্ত তথ্য নিয়ে নেয়া হয়। আর এ কাজটি করা হয় ব্যবহারকারীর ডিভাইস থেকেই। কেননা ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে অনেক ডিভাইসই ব্যবহারকারীদের নোটিফিকেশনের মাধ্যমে তথ্য চুরির ঘটনা জানান দিয়ে দেয়। কিন্তু যদি ইন্টারনেট না থাকে তাহলে অফলাইনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে থাকে। আর এ কারণে শুধুমাত্র মোবাইলের নেকওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়।
একটি ডিজিটাল অধিকার গোষ্ঠী ‘একসেস নাউ’র সঙ্গে যেসব তথ্য শেয়ার করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে গত বছর ৩৩টি দেশে অন্তত ২০০ বার ইচ্ছেকৃতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আরএভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার কারণে সারাবিশ্বে লাখ লাখ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
যেকোন দেশের সরকার দেশের স্বার্থে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিতে পারে। তারা অনেক সময় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয় একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেট সিগন্যাল বন্ধ করে দিতে।
তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে ভিন্ন কথা। তাদের কথায়, বিশ্বের অনেক দেশের সরকার এখন এটিকে দমননীতির একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
কেবল ২০১৯ সালেই ৬০টি প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের সময় জননিরাপত্তার স্বার্থে বা ভুয়া খবর ছড়ানো বন্ধ করতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ১২ বার।
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের শীর্ষে রয়েছে ভারত। ২০১৯ সালের যে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায় গত বছর ভারতেই সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গত বছর ১২১ বার মোবাইল ডাটা বা ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ইন্টারনেট বন্ধ করার ঘটনা ঘটেছে ভারত শাসিত বিতর্কিত অঞ্চল কাশ্মীরে।
মধ্য আফ্রিকার দেশ শাডে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। ২০১৮ সালে এই ইন্টারনেট শাটডাউন শুরু হয়, চলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৫ মাস ধরে। সুদান এবং ইরাকেও ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। তখন লোকজনকে ‘অফলাইনে’ তাদের সব কাজ সারতে হয়েছে।
তবে এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট বন্ধ করার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্ন। কোন দেশে হয়তো পুরো দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, কোথাও কোন সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে, আবার কোন দেশে হয়তো কেবল সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্লক করে দেয়া হয়েছিল।