বৈশ্বিক মেমোরি চিপ বাজার কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে। এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে চীনে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকা, যা এখন অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বহুজাতিক সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো চীনে উৎপাদন কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে চিপ বাজারে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মেমোরি চিপ নির্মাতা ও তৃতীয় বৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এসকে হাইনিক্স ইনকরপোরেশন চলতি বছরের জন্য আগের নির্ধারিত বিনিয়োগের পরিমাণ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।
এসকে হাইনিক্স গত বছর মূলধনি বিনিয়োগ ২৫ শতাংশ কমিয়েছিল। ফলে গত বছর প্রতিষ্ঠানটির মূলধনি বিনিয়োগ ১২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন কোরিয়ান ওনে দাঁড়ায়। মেমোরি চিপ বাজারে চাহিদা মন্দা ও প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন হাব হিসেবে পরিচিত চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চলতি বছরের জন্য আগের নির্ধারিত বিনিয়োগের অংক কমাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে চলতি বছর মোট কী পরিমাণ অর্থ মূলধনি বিনিয়োগ করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এসকে হাইনিক্সের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) চা জিন-সিওক বলেন, বৈশ্বিক মেমোরি চিপ বাজারের অনিশ্চয়তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বিদ্যমান অনিশ্চয়তার মধ্যে বড় অংকের বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোটা ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।
তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে আমাদের উৎপাদন টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর উক্সিতে আমাদের একটি চিপ কারখানা রয়েছে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বাড়তে শুরু করলে কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে কারখানাটি পুনরায় চালু করা হবে। তবে উৎপাদনে ফিরতে বেশ সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বড় অংকের বিনিয়োগ ভুল সিদ্ধান্ত হবে। যে কারণে মূলধনি বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
মোবাইল ডিভাইস, বিশেষ করে স্মার্টফোনের মেমোরি চিপ ও ডিসপ্লে প্যানেলের বৃহৎ উৎপাদক দেশ চীন। দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বৈশ্বিক মেমোরি চিপ বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং ও এসকে হাইনিক্স। উভয় প্রতিষ্ঠানেরই উৎপাদন কারখানা চীনে অবস্থিত।
চা জিন-সিওক বলেন, বাজার পরিস্থিতি উন্নত হলে আমরা মূলধনি বিনিয়োগ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করব। অর্থাৎ বাজারে চাহিদা বাড়লে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। তবে আপাতত অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগ নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছি।
এসকে হাইনিক্স গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক খতিয়ান প্রকাশের পর জানায়, বৈশ্বিক চিপ বাজারে কিছুটা চাহিদা বেড়েছে। তার পরও তারা বিনিয়োগের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে অন্যান্য খাতের মতো বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পেও অনিশ্চতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পের চিত্রপট বদলে দিয়েছে। যে কারণে স্যামসাংয়ের মতো বৃহৎ প্রতিদ্বন্দ্ব্বী নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে চিপবাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
এসকে হাইনিক্সের আর্থিক খতিয়ান অনুযায়ী, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তাদের পরিচালন মুনাফা ৯৫ শতাংশ কমে ২৩ হাজার ৬০০ কোটি কোরিয়ান ওনে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রান্তিকটিতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা ৪৩ হাজার ৩০০ কোটি ওনে পৌঁছানোর পূর্বাভাস ছিল। ২০১২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের পর গত প্রান্তিকে সর্বনিম্ন পরিচালন মুনাফার মুখ দেখেছে এসকে হাইনিক্স। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির গত প্রান্তিকের পরিচালন মুনাফা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের ৪ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ওনের চেয়ে অনেক কম।
বিবৃতিতে এসকে হাইনিক্স জানায়, বৈশ্বিক বাজার খারাপ সময় পার করলেও তাদের মেমোরি চিপ ও সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের কিছুটা চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু তার পরও তারা বিনিয়োগ স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নতুন করে ভাবছে। কারণ বৈশ্বিক চিপবাজারের অনিশ্চয়তা এখন আগের চেয়ে আরো তীব্র হয়েছে।