উৎপত্তিস্থল চীন হলেও নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্ত শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলছে। এটিকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পের চিত্র বদলে গেছে। অনেক বহুজাতিক প্রযুক্তি জায়ান্ট কর্মীদের বাড়িতে থেকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে। ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন সরকার। এ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রযুক্তি শিল্প কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছেন হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তারা।
হোয়াইট হাউজ ও প্রযুক্তি শিল্প কর্মকর্তাদের আলোচনায় উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু দেশটিতে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই নয়, বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিবৃতিতে মার্কিন প্রধান প্রযুক্তি অফিসার মাইকেল ক্র্যাটসিওস বলেন, মার্কিন প্রযুক্তি শিল্পসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় একটি নতুন ডাটাবেজ তৈরির পরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস ঠেকাতে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি সরবরাহ করে চিকিৎসা গবেষকদের সহায়তা করতে পারে কিনা, তা বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, হাই- ন্ড প্রযুক্তি কোম্পানি এবং বৃহৎ অনলাইন প্লাটফর্মগুলো করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিজেদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
গত বুধবার হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় অংশ নেয়া প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো হলো—বৈশ্বিক ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ডটকম, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল, সিসকো সিস্টেমস, সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক, অ্যালফাবেট নিয়ন্ত্রিত সার্চ জায়ান্ট গুগল, আইবিএম, সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট ও টুইটারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
হোয়াইট হাউজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৈঠকে দেশটির অসংখ্য স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য ফেডারেল এজেন্সি ব্যক্তিগতভাবে অংশ নিয়েছিল।
হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো, ভাইরাসটি সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধের জন্য সর্বোত্তম প্রতিরোধ ও শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চালু করা। এ সময় টেলিহেলথ নিয়ে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
এছাড়া বৈঠকে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা এয়ারলাইনস, আর্থিক ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের সদস্যদের সঙ্গেও নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর আরো কী কী পদক্ষেপ সংযোজন করা যেতে পারে, তা নিয়েও পৃথক বৈঠক করেছেন।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এর আগে ফেডারেল স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের করোনাভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়গুলোকে গোপন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, যা মার্কিন প্রযুক্তি শিল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে জানানো আহ্বানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অনেকেই মনে করছেন, নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নতুন ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ তথ্য প্রাপ্তিকে সীমাবদ্ধ করবে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যত সময় যাচ্ছে, তত এর ভয়বহতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ কর্তৃপক্ষ।