বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। পৃথিবীর অনেক দেশকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ হলো বিদেশফেরত প্রবাসীরা। যাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। এমন পরিস্থিতিতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে দেশের পাঁচ তরুণ তৈরি করেছেন “কোয়ারেন্টাইন ট্র্যাকার” অ্যাপস।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করা অরূপ গোলদার ধ্রুব, কম্পিউটার বিজ্ঞান (সিএসই) থেকে পাস করা নাঈম রেজা ও সাকিব হাসান সৌর এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করা ধ্বনঞ্জয় বিশ্বাস ও ফয়সাল আহমেদ শুভ এই অ্যাপসটি তৈরি করেছেন।
অ্যাপটির নির্মাতারা জানান, কোয়ারেন্টাইন ট্র্যাকারের মাধ্যমে ট্র্যাকিং এমন একটি সিস্টেম যা সরকারকে সাহায্য করবে কোয়ারেন্টাইন ব্যক্তিকে (যে কোন সংখ্যার) ট্র্যাক করতে। এই ট্র্যাকিং অ্যাপসে জিপিএস এবং ফেইস ডিটেকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে চীনা এবং কোরিয়ানরা এই প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ সাহায্য পেয়েছে।
এ বিষয়ে দল নেতা সাকিব হাসান সৌর ইউএনবিকে বলেন, “করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত সফল চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো সফল হয়েছে। তাদের কার্যকলাপ এবং কিভাবে তারা পুরো বিষয়টি করেছে সেদিকে যদি লক্ষ্য করি তাহলে একটি বিষয় খুবই পরিষ্কার যে তারা সফলভাবে বড় পরিসরে কোয়ারেন্টাইন প্রোগ্রাম চালাতে পেরেছে এবং তার জন্যে তারা প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আমাদের এখানে কিছু সংখ্যক মানুষকে কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় আছেন, যাদের ম্যানুয়ালি ট্র্যাক করা খুবই সহজ। কিন্তু যদি আমরা সেটা বড় পরিসরে করতে চাই, সেক্ষেত্রে এরকম ম্যানুয়াল প্রোসেস দিয়ে পুরো বিষয়টিকে সফলভাবে চালনা করা প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে আমাদের কোয়ারেন্টাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম অ্যাপ বড় পরিসরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের ট্র্যাক করতে সহায়তা করবে।”
“কোয়ারেন্টাইন ট্র্যাকার” অ্যাপসে জিপিএস/ফেইস ডিটেকশন প্রযুক্তিসহ ব্যবহার করা হয়েছে জানিয়ে সৌর বলেন, “আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি এবং আশা করছি এই সিস্টেম ব্যবহার করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা জোরালো ভূমিকা রাখবেন।”
একই পদ্ধতিতে বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে জানিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী সৌর বলেন, “সাধারণ মানুষ তাদের পরিবার-পরিজনদের (যারা হয়তো দূরে থাকেন কিংবা করোনাভাইরাস নিয়ে ততটা সচেতন নন) ট্র্যাক করতে পারবে, যাতে তারা হোম-কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় থাকেন।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সোমবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৩৩ জন আক্রান্তের তথ্য জানিয়েছে সরকার। যাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং পাঁচজন সুস্থ হয়েছেন।