প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে ‘হোম কোয়ারেন্টিন’ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছে স্বয়ং চীন, তাইওয়ানসহ বেশ কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশ সরকারও হোম কোয়ারেন্টিনকে কার্যকর পদ্ধতি বিবেচনায় পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে হোম কোয়ারেন্টিন প্রয়োগের ধরন এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ সমস্যার সমাধানে হোম কোয়ারেন্টিনের উন্নত ও গতিশীল ব্যবস্থাপনায় দেশের তরুণ একদল প্রযুক্তিবিদের হাতে নির্মিত হতে চলেছে দুটি অ্যাপ।
অ্যাপ দুটি উন্নয়নে কাজ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক একদল শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রযুক্তিবিদ। দলটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাকপ্যাক’-এর চিফ টেকনোলজি অফিসার সাকিব হাসান সৌর। এ দলে বুয়েটের যে গ্র্যাজুয়েটরা কাজ করছেন, তাদের মধ্যে আছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ুয়া ‘ব্যাকপ্যাক’-এর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অরূপ গোলদার ধ্রুব ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান শপআপের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নাঈম রেজা। প্রযুক্তিদলের অন্য দুই সদস্য হলেন শাবিপ্রবির সিএসই গ্র্যাজুয়েট ‘ব্যাকপ্যাক’-এর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ধ্বনঞ্জয় বিশ্বাস ও ফয়সাল আহমেদ।
অ্যাপ দুটির একটির নামকরণ করা হয়েছে ‘স্টে হোম’ এবং অন্যটি ‘কোয়ারেন্টিন ট্রাকার’। এর মধ্যে ‘কোয়ারেন্টিন ট্রাকার’ অ্যাপটির উন্নয়নকাজ ৯০ শতাংশ এবং ‘স্টে হোম’ অ্যাপটির ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাতারা বলছেন, ‘হোম কোয়ারেন্টিন’ ব্যবস্থাপনা আগামী তিনদিনের মধ্যে অ্যাপ দুটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
মার্চের ১ তারিখ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের খুঁজতে পুলিশের তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। কিন্তু দেশে ফেরা প্রবাসীদের কেন্দ্রীয় কোনো ডাটাবেজ না থাকায় সার্বক্ষণিক তদারকি করার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যবস্থা সহজ করতে ‘কোয়ারেন্টিন ট্রাকার’ অ্যাপটি সহায়তা করবে বলে জানাচ্ছে নির্মাতারা। এছাড়া ‘স্টে হোম’ অ্যাপটি দিয়ে পারিবারিক বা ছোট আকারের হোম কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থার তদারকি করা যাবে।
কীভাবে কাজ করবে অ্যাপ দুটি, এ নিয়ে বণিক বার্তাকে এ দলের সমন্বয়ক ‘ব্যাকপ্যাক’-এর চিফ টেকনোলজি কর্মকর্তা সাকিব হাসান সৌর বলেন, ‘কোয়ারেন্টিন ট্রাকার’ অ্যাপটি করোনাভাইরাসের সন্দেহযুক্ত বা দেশের বাইরে থেকে আসা সব প্রবাসীর স্মার্টফোনে ইনস্টল করতে হবে। এরপর তাদের জন্য আলাদা একটা ওয়েব পোর্টাল চালু করে সবাইকে তদারকি করা যাবে। সেক্ষেত্রে হোম কোয়ারেন্টিনকৃত ওই ব্যক্তি অবস্থানকৃত বাড়িতে গিয়ে অ্যাপসের হোম কোয়ারেন্টিন বাটনে চাপ দিলে কেন্দ্রীয় ওয়েবের সঙ্গে যুক্ত হবেন। এরপর থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে গেলে কেন্দ্রীয় ওয়েবে সংকেত পাঠাবে। এ অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হলে নির্দিষ্ট মেয়াদে সবাইকে বাড়িতে রাখা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
‘স্টে হোম’ অ্যাপ সম্পর্কে তিনি বলেন, মনে করেন আপনার গ্রামের বাড়িতে বা ঢাকার কোনো একটি বাসার সবার কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা দরকার। তাদের স্মার্টফোনে এ অ্যাপটি চালু করে আপনার স্মার্টফোনের ব্যবহূত অ্যাপটির সঙ্গে ওই মোবাইল নম্বরগুলো যুক্ত করলেই তাদের গতিবিধি সম্পর্কে জানা যাবে। এটা মূলত পারিবারিকভাবে ব্যবহারের জন্য।
সাকিব হাসান সৌর বলেন, ‘কোয়ারেন্টিন ট্রাকার’ অ্যাপটি নিয়ে এরই মধ্যে সরকারের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকার বা দায়িত্বশীল কোনো সংস্থা চাইলে বাণিজ্যিকভাবে নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তারা এটা সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে দিতে চান বলে জানান তিনি।
তবে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এখনই যদি ‘কোয়ারেন্টিন ট্রাকার’ অ্যাপটি কোনোভাবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে ‘স্টে হোম’ অ্যাপটি আগামী তিনদিনের মধ্যে উন্মুক্ত করা হবে। আমরা আশা করছি, সরকারিভাবে ‘কোয়ারেন্টিন ট্রাকার’ ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হবে। আর যারা তাদের পরিবারের ব্যাপারে একটু বাড়তি যত্ন নিতে চান, তারা ‘স্টে হোম’ অ্যাপটি ব্যবহার করবেন বলে মনে করছেন তরুণ এ প্রযুক্তিবিদরা।