বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী বিল গেটস যদি এখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হতেন, তবে তিনি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লোকজনকে আইসোলেশনে রেখে রেখাটাকে চ্যাপ্টা করাকে (ফ্ল্যাটেন দ্য কার্ভ) অগ্রাধিকার দিতেন।
মঙ্গলবার টেড (টিইডি) সঞ্চালক ক্রিস অ্যান্ডারসনকে বিল গেটস বলেন, ‘(প্রেসিডেন্ট হলে) স্পষ্ট বার্তা হতো, আইসোলেশন বজায় রাখা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই; এবং এটি একটা লম্বা সময় ধরে চলবে। চীনাদের ক্ষেত্রে এটি ছিল ছয় সপ্তাহের মতো, সুতরাং আমাদেরও সেরকম করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং তা খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করতে হবে।’
বিল গেটসের মতে, ‘আপনারা যদি (সারাদেশে) ভালভাবে আইসোলেশনে থাকতে পারেন, তাহলে ২০ দিনের মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা সত্যিই পরিবর্তিত হয়েছে; কমে গেছে। আর এটা দেখেই বোঝা যাবে আপনারা সঠিক পথে আছেন।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গেটস আরও জোর দিতেন, ‘এটি খুব সহজ হবে না। এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট বার্তা দরকার।’
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ১৮টি অঙ্গরাজ্য, ৩১ কাউন্টি ও ১৩ শহরের প্রায় ১৮ কোটি মানুষকে ঘরে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শিগগিরই দেশটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়া হবে। ১২ এপ্রিল নাগাদ তা খোলার কথা জানিয়েছেন তিনি।
তবে বিল গেটস অর্থের চেয়ে মানুষের স্বাস্থ্যকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা খুবই বেদনার যে অর্থনৈতিক প্রভাব খুবই নাটকীয়। আমাদের পুরো জীবনে এমন ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। তবে অর্থ ফিরিয়ে আনা খুব সম্ভব, কিন্তু মানুষের জীভন ফেরানো অসম্ভব। তাই আমরা অর্থনৈতিক বিশাল চাপের যন্ত্রণা মেনে নিতে যাচ্ছি, যাতে রোগ আর মৃত্যুর যন্ত্রণা কমানো যায়।’
বিল গেটস এই ভাইরাসের থাবা থেকে মুক্ত থাকতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি নিয়েছেন। বাড়ি থেকে কাজ করছেন। তিনি করোনাভাইরাস সংকটে অনেকগুলো ধনী দেশ আক্রান্ত। সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সামাজিক দূরত্ব (যেটাকে আমি শাটডাউন বলছি) মেনে চলাসহ সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে আগামী দুই থেকে তিন মাসে ধনী দেশগুলো করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সক্ষম হবে। আমি চিন্তিত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে। তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধনী দেশগুলোর মতো তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার উপায় নেই। তাদের হাসপাতালগুলোর সক্ষমতাও অনেক কম।
বিল গেটস বলেন, সবচেয়ে বড় যে বিষয় তা হলো—শাটডাউন পদ্ধতি মেনে চলুন। মানে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রেখে সামাজিক দূরত্বের নীতি মেনে চলুন। এতে করে আপনার আশপাশের লোকের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হবে না। আক্রান্তের হার নাটকীয়ভাবে কমে যাবে। এতে করে দ্রুততম সময়ে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারব।