বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্ত বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল লকডাউনের আওতায় থাকায় ঘরবন্দি শতকোটির বেশি মানুষ আতঙ্কে সময় পার করছে। সংকটপূর্ণ এ পরিস্থিতিতে মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে একদল সাইবার অপরাধী। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানো এবং আক্রান্ত হয়ে থাকলে সুস্থ হয়ে ওঠার উপায় জানানোর প্রলোভন দেখিয়ে ফিশিং মেসেজ পাঠিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সাইবার অপরাধীদের এমন চেষ্টা রুখে দেয়ার জন্য করোনাসংশ্লিষ্ট হ্যাকিং ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মিলে ‘কভিড-১৯ সিটিআই লিগ’ নামে একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপ গঠন করেছে। খবর রয়টার্স।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন গঠিত সাইবার নিরাপত্তা গ্রুপটিতে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশের সাইবার বিশেষজ্ঞ শামিল হয়েছেন। গ্রুপটির স্বেচ্ছাসেবক তালিকায় রয়েছেন, বৈশ্বিক ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ডটকম ও সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসটের মতো প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ পদমর্যাদার সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট পেশাদার। গ্রুপটির প্রত্যেক সদস্যেরই রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিনের কাজ করার অভিজ্ঞতা। কভিড-১৯ সিটিআই লিগ আন্তর্জাতিক গ্রুপের ‘সিটিআই’ অংশটি মূলত ‘সাইবার থ্রেট ইন্টেলিজেন্স’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
কভিড-১৯ সিটিআই লিগ গ্রুপের প্রাথমিক ব্যবস্থাপক রয়েছেন চারজন। ওই চারজনের একজন মার্ক রজার্স জানিয়েছেন, মেডিকেল সুবিধা ও চলমান মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম সারিতে রয়েছে এমন সংস্থা ও ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে চালানো সাইবার আক্রমণ ঠেকানোর বিষয়টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিভাগে হ্যাকিং ঠেকানো নিয়েও কাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, তারা সংকটপূর্ণ এ পরিস্থিতিতে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোর সাইবার নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা হ্যাকিং কনফারেন্স ডেফ কনের নিরাপত্তা প্রধান ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান অক্টার ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন মার্ক রজার্স।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্টারনেট দুনিয়ায় কভিড-১৯ আতঙ্ককে সুযোগ হিসেবে নিয়ে চলমান আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করতে ও ফিশিং আক্রমণ শনাক্ত ও রুখে দিতে কার্যক্রম জোরদার করেছে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে মার্ক রজার্স বলেন, আমি এর আগে কখনো এত ফিশিং আক্রমণ দেখিনি। আক্ষরিক অর্থেই যতগুলো পথ রয়েছে, সবগুলোতে ফিশিং বার্তা দেখছি। উল্লেখ্য, ফিশিং বার্তার মাধ্যমে পাসওয়ার্ড ও স্পর্শকাতর তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে সাইবার অপরাধীরা। এরপর ওই পাসওয়ার্ড বা তথ্যগুলো ব্যাংক, ই-মেইল বা অন্যান্য অ্যাকাউন্টে অনুপ্রবেশের জন্য ব্যবহূত হয়।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের এমন উদ্যোগকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। কভিড-১৯ সিটিআই লিগ নিয়ে স্বেচ্ছায় সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ দারুণ ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। আমি আগে কখনো স্বপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এমনভাবে সহযোগিতার হাত বাড়াতে দেখিনি। আশা করছি, পরবর্তী সময়েও এ গ্রুপের কার্যক্রম চলমান থাকবে। কারণ এটি সুন্দর একটি উদ্যোগে পরিণত হয়েছে।
শুধু সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাই নন; বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগলসহ একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের বিস্তৃত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজে লাগাচ্ছে। গুগল এরই মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানো, সংক্রমিত হলে করণীয় এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্য সংবলিত একটি ওয়েবসাইট ও অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে, যা ব্যবহারকারীদের করোনাভাইরাসের উপসর্গ পরীক্ষার সুযোগ দেবে। গুগলের পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য বিনা মূল্যে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুবিধা দেয়া হচ্ছে, যাতে মানুষের কাছে করোনাভাইরাস নিয়ে সঠিক তথ্য পৌঁছতে পারে।