বিশ্বের বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার চীন। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অন্যান্য শিল্পের মতো স্মার্টফোন শিল্পের সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। অনেক স্মার্টফোন কারখানার কর্মীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়। দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করেছে সব ব্যবসা কার্যক্রমও। দেশটির স্মার্টফোন বাজারে বিক্রিও এখন পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফেরার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। চীনভিত্তিক ডিভাইস নির্মাতা শাওমির পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হয়। খবর রয়টার্স।
শাওমির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) শৌ জি চিউ বলেন, চীনের স্মার্টফোন বাজার সম্পূর্ণরূপে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবমুক্ত হতে চলেছে। এরই মধ্যে স্মার্টফোন বাজার বিক্রি বিবেচনায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। যে কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্মার্টফোন বিক্রিতে ধস দেখা দেয়। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে শাওমি কী ধরনের আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছে তা প্রকাশ করেননি তিনি।
শাওমির এ কর্মকর্তার দাবি, নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা চীনের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাজারে ছড়িয়ে পড়লেও বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার শিগগিরই আগের অবস্থানে ফিরবে। চলতি মাস পর্যন্ত বাজারে কিছুটা মন্দা ভাব দেখা যাবে। তবে আগামী মাসে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। আশা করছি, চীনের মতো বৈশ্বিক বাজারেও স্মার্টফোন বিক্রি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।
সম্প্রতি গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক খতিয়ান প্রকাশ করেছে শাওমি। এতে দেখা যায়, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব বেড়েছে ২৭ শতাংশ, যা বিশ্লেষকদের পর্বাভাসের চেয়ে বেশি। একই প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিক্রি ৫ হাজার ৬৫০ কোটি চাইনিজ ইউয়ানে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের মোট বিক্রি ৪ হাজার ৪৪২ কোটি ইউয়ানের চেয়ে বেশি। বিক্রির ক্ষেত্রেও বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অতিক্রম করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি ৫ হাজার ৫৬০ কোটি ইউয়ানে পৌঁছানোর পূর্বাভাস ছিল।
শাওমির রাজস্ব আয়ের ৬০ শতাংশই আসে মোবাইল ডিভাইস বিক্রি থেকে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি অনলাইন বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য কনজিউমার হার্ডওয়্যার বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব আয় করে আসছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের রাজস্ব ২৩ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৮০ কোটি ইউয়ানে পৌঁছেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে শাওমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লেই জুন চীনের স্মার্টফোন শিল্পসংশ্লিষ্টদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে বিধ্বস্ত হয়ে পড়বে। যে কারণে স্মার্টফোন শিল্পসংশ্লিষ্টদের দ্রুত কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন লেই জুন।
ওই সময় তিনি বলেন, হুবেই রাজ্যে আমার বেড়ে ওঠা। উহান কলেজে আমি চার বছর পড়াশোনা করেছি। কাজেই উহান ঘিরে আমার অনুভূতি অনেক গভীর। আমি বিশ্বাস করি, চীনের উহান একটি ঐশ্বর্যময় শহর এবং সেখানকার বাসিন্দারা নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফল হবেন। বাস্তবে উহান সফল হয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর চীনজুড়েই স্মার্টফোন শিল্পের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প উৎপাদন কারখানা ও সরবরাহকারীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল। দেশটির কিছু অঞ্চলে টানা কয়েক সপ্তাহ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। এখন দেশটির অনেক স্টোর ও শপিংমল প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে।
চীনে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রযুক্তিপণ্য বাজারের চিত্র বদলে গেছে। ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়ে চীনে কভিড-১৯ আক্রান্ত কমলেও বিশ্বের অনেক দেশে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিলম্বিত কাজ পুনরায় শুরু, কর্মীদের কাজে যোগদানের অনিশ্চয়তা, চীন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা কারণে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের উৎপাদন ও সরবরাহে বিলম্ব ঘটতে দেখা গেছে। চীন স্মার্টফোনসহ অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনের প্রধান হাব। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশটির উৎপাদন খাতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশ্বের বৃহৎ প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো তাদের ডিভাইস উৎপাদনের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল।