চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এলজি ডিসপ্লের রাজস্ব ৪ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ওনে দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। এলজি ডিসপ্লে এ নিয়ে টানা পঞ্চম প্রান্তিকের মতো রাজস্ব কমার তথ্য দিল। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে স্মার্টফোন ও টেলিভিশনের ডিসপ্লে প্যানেলের চাহিদা হ্রাস রাজস্ব কমার প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এলজি ডিসপ্লে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের আইফোনসহ অন্যান্য ডিভাইসের অন্যতম ডিসপ্লে সরবরাহকারী। খবর রয়টার্স।
এলজি ডিসপ্লের আর্থিক খতিয়ান অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তাদের পরিচালন লোকসান ৩৬ হাজার ২০০ কোটি ওনে পৌঁছেছে, যা পূর্বাভাসের চেয়ে অনেকটা কম। পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন লোকসান ৩৯ হাজার কোটি ওনে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে এক বছর আগের চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন লোকসান তিন গুণ বেড়েছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে এলজি ডিসপ্লের পরিচালন লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ২০০ কোটি ওন।
বিবৃতিতে এলজি ডিসপ্লে জানায়, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চল লকডাউনে আছে। অনেক অফিস কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করার ব্যবস্থা করেছে। ভয়াবহ এ পরিস্থিতির মধ্যেও কম্পিউটার মনিটর, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট ডিভাইসের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু তা স্মার্টফোন ও টিভির ডিসপ্লের চাহিদা কমার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
এলজি ডিসপ্লে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তাদের পরিচালন লোকসান ৪২ হাজার ২০০ কোটি ওনে দাঁড়ানোর তথ্য দিয়েছিল, যা গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ছিল ৪৩ হাজার ৬০০ কোটি ওন। অর্থাৎ গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকে পরিচালন লোকসান কিছুটা কমেছে। ২০১৮ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফার অংক ছিল ২৭ হাজার ৯০০ কোটি ওন।
গত বছর চতুর্থ প্রান্তিকে সুদ, শুল্ক, অবচয় ও ক্রমশোধ পরিশোধের আগে এলজি ডিসপ্লের আয় হয়েছিল ৫৮ হাজার ৬০০ কোটি ওন, যা একই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের ৬১ হাজার ৩০০ কোটি ওনের চেয়ে কম। অন্যদিকে ২০১৮ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে সুদ, শুল্ক, অবচয় ও ক্রমশোধ পরিশোধের আগে প্রতিষ্ঠানটির আয়ের অংক ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪০০ কোটি ওন।
গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে এলজি ডিসপ্লের নিট লোকসান ১ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ কোটি ওনে পৌঁছেছে, যা এর আগের প্রান্তিকে ছিল ৪৪ হাজার ২০০ কোটি ওন। গত বছর অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে লোকসান বাড়লেও এক বছর আগের একই প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির নিট আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৩০০ কোটি ওন।
এলজি ডিসপ্লের আর্থিক খতিয়ান অনুযায়ী, গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকে রাজস্ব বেড়েছে ১০ শতাংশ। চতুর্থ প্রান্তিকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ ছিল বৃহৎ আকৃতির টিভির ওএলইডি প্যানেল এবং স্মার্টফোনের জন্য পি-ওএলইডি (প্লাস্টিক ওএলইডি) ডিসপ্লে প্যানেলের বিক্রি বেড়ে যাওয়া। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে এলজি ডিসপ্লের বৃহৎ ডিসপ্লে প্যানেল বিক্রি ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
গত মার্চের শুরুর দিকে ডিসপ্লে কারখানার পার্শ্ববর্তী এক ব্যাংকে কভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর গুমিতে একটি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিল এলজি ডিসপ্লে, যা এখনো স্বাভাবিক উৎপাদনে ফেরেনি। একই অঞ্চলে কভিড-১৯ আক্রান্ত কর্মী শনাক্ত হওয়ায় একটি মোবাইল ডিভাইস উৎপাদন কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছিল স্যামসাং।
এলজি ডিসপ্লে গুমির কারখানায় স্মার্টফোনের স্ক্রিন তৈরির কাজ করে আসছিল। চীনে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পের চিত্রপট বদলে দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াতেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে এলজি ডিসপ্লে ও স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এলজি ডিসপ্লের কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এর প্রভাব বহুজাতিক অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে, যা স্পষ্ট হবে চলতি প্রান্তিকে। কারণ অ্যাপলের আইফোন থেকে শুরু করে অনেক ব্র্যান্ডের মোবাইল ডিভাইসের ডিসপ্লে স্ক্রিন তৈরি করে আসছে এলজি ডিসপ্লে। এর ফলে উৎপাদন কয়েক দিনের জন্য বন্ধ থাকলেও সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।