ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান চেয়েছিল ইন্টারনেটের অন্যতম টপ ডোমেইন ডটঅর্গ রেজিস্ট্রেশনের পুরো কর্তৃত্ব কিনে নিতে। এজন্য তারা বেশ বড় অংকের অর্থও দিতে চেয়েছিল- প্রায় ১১৩ কোটি ডলার। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ অভিভাবকের মতোই জানিয়ে দিয়েছে- এসব চলবে না!
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেটের প্রতিবেদন বলছে, ইথোস ক্যাপিটালের কাছে ডটঅর্গ ডোমেইন বিক্রিতে অনুমোদন দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে আইক্যান।
বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের নীতিগত বিষয়গুলো দেখভালের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন ফর ডোমেইন নেইমস অ্যান্ড নাম্বার্স (আইসিএএনএন বা আইক্যান) নামে অলাভজনক সংস্থাটি।
ডট অর্গ ডোমেইনের কর্তৃত্ব বিক্রি প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার আইক্যান বলেছে, কোনো আর্থিক বিনিয়োগ সংস্থার কাছে ডট অর্গ ডোমেইন বিক্রির অধিকার হস্তান্তরে অনুমোদন দেওয়া হবে না। আইক্যান বোর্ডও বলেছে তাদের দৃষ্টিতে এ সিদ্ধান্ত “যথাযথ”।
এর আগে ডটঅর্গ-এর দেখভাল করতো ইন্টারনেট ডটঅর্গ-এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘পাবলিক ইন্টারনেট রেজিস্ট্রি’ বা পিআইআর নামে অলাভজনক সংস্থা। একই প্রতিষ্ঠান ডটএনজিও’র নিয়ন্ত্রকও। গত নভেম্বরে পিআইআর বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ইন্টারনেট ডটঅর্গ। সে সময় রফা হয় ‘পাবলিক ইন্টারনেট রেজিস্ট্রি’ (পিআইআর)-কে ১১৩ কোটি ডলারের বিনিময়ে কিনে নেবে ইথোস ক্যাপিটাল।
কোনো ওয়েব ঠিকানায় ডট এর পর যে তিন বা চার অক্ষরের অংশ থাকে সেটিকে ডোমেইন অংশ বলে, যেমন ডটকম, ডটনেট, ডটইনফো ইত্যাদি। এই সবগুলো ডোমেইনই বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কেনাবেচা হয়। কেবল সমস্যা তৈরি হয়েছে ডটঅর্গ নিয়ে। কারণ, বিশেষ এই ডোমেইনটি পেয়ে থাকে অলাভজনক ও জনহিতৈষী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সে কারণে, গত নভেম্বরে ডটঅর্গ-এর কর্তৃত্ব আর্থিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইথোস ক্যাপিটালের কাছে যাওয়ার সম্ভাবনায় তৈরি হয় বিতর্ক। মুনাফার লোভে ডট অর্গ ডোমেইনের অধিকার স্বত্ত্ব ব্যবহার বা বিক্রি শুরু হবে এমন উদ্বেগের কথাও জানান অনেকে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবক স্যার টিম বার্নার্স-লি এই হস্তান্তরকে এক কথায় বলেন “হাস্যকর”।
আইক্যান বোর্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, “আইক্যান বোর্ডের বিশ্বাস, জনস্বার্থ সুচারু রূপে রক্ষার্থে অনুমতি না দেওয়াই শ্রেয়”।
আইক্যানের সিদ্ধান্ত অবশ্য ভালোভাবে নিতে পারেনি ইথোস। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, “বিপজ্জনক নজির” তৈরি করেছে আইক্যানের এ সিদ্ধান্ত যা “উদ্ভাবনের টুঁটি চেপে ধরবে এবং ডোমেইন শিল্পে ভবিষ্যত বিনিয়োগ নির্ধারণ করবে”।
ইথোসের দৃষ্টিতে “নিজ আওতা অতিক্রম করেছে আইক্যান।”
যে সংস্থাকে হস্তান্তর নিয়ে বিতর্ক, সেই পিআইআর-ও আইক্যানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করেছে। সিদ্ধান্তটি “হতাশজনক” জানিয়ে পিআইআর বলেছে “বিধি-বিধান, প্রক্রিয়া এবং চুক্তি অনুসরণ করতে না পারার ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছে এটি”।