২০১৯ সালে ডিভাইস সরবরাহ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারের তকমা দখলে নিয়েছে ভারত। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ক্রমবর্ধমান বাজারটিতে স্মার্টফোন বিক্রি বিবেচনায় স্যামসাংকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ভিভো। টানা কয়েক প্রান্তিকের মতো ভারতের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষ অবস্থান দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছে শাওমি। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর এনডিটিভি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ভারতের স্মার্টফোন বাজারের ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে ভিভো। দেশটিতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট ৬৭ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। গত বছর প্রথম প্রান্তিকে ভারতে মোট ৪৫ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছিল ভিভো।
অন্যদিকে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের দখল কমে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দেশটিতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট ৬৩ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রিতে সক্ষম হয়েছে স্যামসাং, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ কম। গত বছর প্রথম প্রান্তিকে ভারতে মোট ৭৩ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছিল স্যামসাং।
ক্যানালিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারের ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে চীনভিত্তিক শাওমি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশটিতে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ভারতের বাজারে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও প্রথম প্রান্তিকে বাজার দখলে শীর্ষ চারে জায়গা করে নিয়েছে রিয়েলমি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশটিতে মোট ৩৯ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রিতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বাজারটিতে মোট ২৮ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করে শীর্ষ পাঁচে জায়গা পেয়েছে অপো।
ভারতের স্মার্টফোন বাজারে গত বছর ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে ভিভো। বছরজুড়ে ব্র্যান্ডটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩৪ শতাংশ। এছাড়া শুধু অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৭৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। তুলনামূলক সাশ্রয়ী ডিভাইসে উন্নত ফিচার দিয়ে গ্রাহক টানায় জোর দিচ্ছে ভিভো। এ কৌশল ভারতে ব্যবসা জোরদারে অনেকটা কাজে দিয়েছে। এর সুবাদে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারে প্রথমবারের মতো স্যামসাংকে হটিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বছরজুড়ে ভারতে স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন সরবরাহ ৫ শতাংশ কমেছে। তবে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন সরবরাহ স্থিতিশীল ছিল। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নিজেদের হালনাগাদ ‘এ’ ও ‘এম’ সিরিজের একাধিক ডিভাইস বাজারে ছাড়ে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও তা বাজার দখল বাড়াতে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি।
ভারতে গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে অপোর স্মার্টফোন সরবরাহ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে খুব একটা ভালো করতে পারেনি ব্র্যান্ডটি। সাশ্রয়ী ডিভাইস এ৫এস, এ৯ ২০২০ ও এ৫ ২০২০ অফলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে বিক্রি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যা জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ব্র্যান্ডটির ডিভাইস সরবরাহ প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, গত বছর ভারতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে অপোর সাব-ব্র্যান্ড রিয়েলমি। বছরজুড়ে এ ব্র্যান্ডের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫৫ শতাংশ। আগ্রাসী বিপণন কৌশল এবং সাশ্রয়ী দামে তুলনামূলক হাই-এন্ড ফিচার সংবলিত ডিভাইস সরবরাহ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারে ব্র্যান্ডটির প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। যে কারণে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ভারতে মূল ব্র্যান্ড অপোকে পেছনে ফেলে শীর্ষ চারে জায়গা পেয়েছে রিয়েলমি।
ভারতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে রিয়েলমি। আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর প্রথম বছরেই ভারতে দেড় কোটি ইউনিটের বেশি স্মার্টফোন বিক্রির দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভারতে কার্যক্রম শুরুর প্রথম বছর হিসেবে ২০১৯ সালে বাজারটিতে যতসংখ্যক ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে, তা দ্বিতীয় বছর দ্বিগুণে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে রিয়েলমি। অর্থাৎ চলতি বছর শুধু ভারতে তিন কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। রিয়েলমি শুরু থেকে চীনা ব্র্যান্ড ভিভো ও অপোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। ভিভো ও অপোর মতোই এটি অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে বিপণন ও অফলাইন ডিস্ট্রিবিউশনে বিনিয়োগে জোর দিচ্ছে। ভারতে ব্যবসা বাড়াতে বাজার দখলে শীর্ষে থাকা শাওমিকে অনুসরণ করছে রিয়েলমি।