২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৫টি সংগঠন একটি সমন্বিত বাজেট প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দাখিল করেছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ সংগঠনগুলো।
এতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) সভাপতি শহিদ-উল মুনির, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান শরিফ এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, করোনা সংকটকালীন সময়ে বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি দাপ্তরিক কার্যক্রমসমূহ ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। ঘরবন্দী মানুষ তাদের খাদ্যসামগ্রীসহ জরুরি নানাবিধ পণ্য ও সেবা ঘরে বসেই অনলাইনে ক্রয় করতে পারছে। সরকার পরিচালিত ওয়েবসাইট https://corona.gov.bd এর মাধ্যমে করোনা সংক্রান্ত যে তথ্য উপাত্ত নিয়মিত অপডেট এবং মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে যেসব তথ্য ট্র্যাকিং করা হচ্ছে তাও বিভিন্ন সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা কোম্পানিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করছে। এ ধরনের সংকট মোকাবেলায় তাই প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভুত হচ্ছে।
প্রযুক্তি সংগঠনগুলোর মতে, করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারির ফলে গোটা পৃথিবীর সমস্ত ব্যবসা বাণিজ্য ও উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেলেও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি বন্ধ হয়নি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতগুলো। বরং ই-কর্মাস ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে অফিস, দূরবর্তী শিক্ষা, যোগাযোগ, আর্থিক সাহায্য, ডোনেশন ক্যাম্পেইন, তথ্যসেবা, টেলি মেডিসিনের সাহায্যে স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সহায়তা, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা প্রভৃতি চলছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উপর নির্ভর করেই। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে অনলাইন কোর্টের মাধ্যমে কেস নিস্পত্তি করার প্রক্রিয়া। যেখানে স্বাস্থ্য ও কৃষির পরে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা আইসিটি প্রকল্পগুলোর, সেখানে এই খাতের বরাদ্দকে বাতিল বা সংকুচিত করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। কল সেন্টারগুলো কেবলমাত্র ৯৯৯ এবং ৩৩৩ মাধ্যমেই গত ২ মাসে প্রায় ৭০ লক্ষ ফোন কলের মাধ্যমে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে এটা এ খাতের একটি বড় অবদান বলেও সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। পাশপাশি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দিয়ে এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পণ্য পৌঁছে দিয়েছে। এজন্য তাদের সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে অভিনন্দন প্রাপ্য বলেও তারা উল্লেখ করেন।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে ইতিপূর্বে অনুদান ও শহজ শর্তে ঋণ চেয়ে সমন্বিতভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এ ৫ সংগঠন আবেদন করে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী রপ্তানিমুখী শিল্প, সেবা খাত ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ হিসেবে ঘোষণা করলেও এর সুবিধা প্রযুক্তি খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিতে পারছে না। কারণ ব্যাংকগুলো বলছে, তাদের কাছ থেকে আগে ঋণ নেওয়া না থাকলে কিংবা বাড়ি অথবা জমি মর্টগেজ না রাখলে তাদের পক্ষে লোন দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য এ খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা নিতে পারে সেজন্য সরকারকে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, কোম্পানিগুলো ২ শতাংশ সরল সুদে ১ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণ নিতে পারে সে বিধান থাকা দরকার এ ঋণে। পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক বিভিন্ন ই-গভর্ণেন্স প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সকল প্রকার নাগরিক সেবা অনলাইনে প্রদান করা গেলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।
করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনেতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সরকারের পাশাপাশি দেশের জনসাধারণ তাদের প্রয়োজনে যাতে দেশীয় সফটওয়্যার ও আইটি সেবা ব্যবহারে এগিয়ে আসে সেজন্যে তাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়। একইসাথে আসন্ন বাজেটে সফটওয়্যার ও আইটিইএস এর উপর প্রদত্ত আয়কর অব্যাহতির স্বপক্ষে ট্যাক্স এক্সেম্পশন সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সহজীকরণ, আইটিইএস এর বর্তমান সংজ্ঞায় বাদপড়া বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি এবং ই-কমার্স ও আইএসপি সার্ভিসকে আইটিইএস এর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইন্টারনেট সেবায় ৫ শতাংশ ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি ও এনটিটিএন) খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এর পরিবর্তে শূন্য শতাংশ করা, ই-কমার্স খাতকে কর্পোরেট ট্যাক্স এবং ভ্যাট থেকে অন্তত আগামী ৩ বছরের জন্য অব্যাহতি প্রদান এবং ব্যাংক ঋণ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জন্য ই-কমার্স এর একটি পৃথক সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করার জন্যও সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
করোনার কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আইটি সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের যেসব বিল আটকে রয়েছে সেগুলো অতি দ্রুততার সাথে পরিশোধের বিষয়েও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান নেতৃবৃন্দ।