আইফোন নির্মাতা অ্যাপল উৎপাদন সক্ষমতার এক-পঞ্চমাংশ চীন থেকে ভারতে সরিয়ে নিচ্ছে। গত সপ্তাহে এমন তথ্য জানা যায়। এবার ভারতীয় মোবাইল হ্যান্ডসেট নির্মাতা লাভা ইন্টারন্যাশনালের উৎপাদন কার্যক্রম চীন থেকে ভারতে সরিয়ে নেয়ার তথ্য সামনে এনেছে। ভারতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হলেও এতদিন চীনে ডিভাইস উৎপাদন করে আসছে লাভা। শুধু উৎপাদন কার্যক্রমই নয়; আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিজেদের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আরঅ্যান্ডডি) কার্যক্রমও চীন থেকে নিজ দেশে সরিয়ে নিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর ইটি টেলিকম।
ভারত সরকার স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে। এরই অংশ হিসেবে প্রডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) বা স্থানীয়ভাবে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পিএলআই সুবিধার আওতায় ডিভাইস উৎপাদন এবং আরঅ্যান্ডডি কার্যক্রম স্বদেশে স্থানান্তর করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সুবিধার আওতায় অ্যাপল নিজেদের পণ্য উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ ভারতে স্থানান্তরে কাজ শুরু করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরেই চীন থেকে ভারতে ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রম স্থানান্তরের জন্য ৮০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে লাভা। এছাড়া আগামী পাঁচ বছর ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠানটি ৮০০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে।
এ বিষয়ে লাভার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হরি ওম রাই বলেন, আমরা খুবই আগ্রহের সঙ্গে আমাদের সম্পূর্ণ মোবাইল আরঅ্যান্ডডি, ডিজাইন ও উৎপাদন কার্যক্রম চীন থেকে স্বদেশে স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছি। আমরা আশা করছি পুরো প্রক্রিয়া ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, ভারত সরকারের প্রণোদনার কারণে বৈশ্বিক বাজারে কার্যক্রম জোরদারে আমাদের যে উৎপাদন সক্ষমতার ঘাটতি ছিল তা পূরণ হবে। যে কারণে আমরা আমাদের সম্পূর্ণ কার্যক্রম ভারতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কার্যক্রম স্থানান্তর প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের ওপর নির্ভর করছে। পাশাপাশি আমাদের পণ্যের চাহিদা এবং বিশ্বজুড়ে আমরা কতটা বাজার দখলে সক্ষম হচ্ছি তার ওপরও নির্ভর করছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনে ডিভাইস উৎপাদন ফ্যাসিলিটি আউটসোর্স করা হলেও ডিজাইন এবং আরঅ্যান্ডডি ফ্যাসিলিটি লাভার নিজস্ব। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ভারতে কার্যক্রম স্থানান্তরের মাধ্যমে স্থানীয় ও রফতানি চাহিদা পূরণের মতো সেটআপ এবং সক্ষমতা তাদের রয়েছে।
বিবৃতিতে লাভা জানিয়েছে, তারা সম্প্রতি জিইএম গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৬৩০ কোটি রুপি তহবিল সংগ্রহে সক্ষম হয়েছে। এ অর্থ প্রতিষ্ঠানটির আরঅ্যান্ডডি বিভাগের উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে জিইএম গ্রুপ। এর মাধ্যমে হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি ১৫০ ডলার মূল্যের সাশ্রয়ী হ্যান্ডসেট বাজারে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি আইফোন নির্মাতা অ্যাপলের পণ্য উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ চীন থেকে ভারতে সরিয়ে নেয়ার তথ্য সামনে এসেছে। গত কয়েক মাসে এ নিয়ে প্রযুক্তি জায়ান্টটির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এবং ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অ্যাপল পণ্য উৎপাদন সক্ষমতার একটি অংশ চীন থেকে ভারতে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে খুঁটিনাটি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। ভারতে পণ্য উৎপাদন কার্যক্রমের আংশিক সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে স্থানীয় চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতাদের সহায়তায় দেশটিতে আগামী পাঁচ বছরে বার্ষিক রাজস্ব আয় ৪ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, বাস্তবে এসব পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখলে অ্যাপল ভারতের বৃহৎ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং ভারত পরবর্তী স্মার্টফোন উৎপাদন হাব হয়ে উঠবে।
গত সপ্তাহে ভারত সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, আমরা আশা করছি অ্যাপল চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতা উইস্ট্রন ও ফক্সকনের মাধ্যমে রফতানির জন্য ভারতে ৪ হাজার কোটি ডলার মূল্যের স্মার্টফোন উৎপাদন করবে। ভারত সরকার স্থানীয়ভাবে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে। যে কারণে ভারত সরকারের পিএলআই স্কিমের আওতায় লাভবান হবে জনপ্রিয় আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি বলেন, বেশকিছু বিষয় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অ্যাপল নির্বাহী এবং ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিষয়গুলো সমাধানে কাজ করছেন। শিগগিরই ছোটখাটো সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন অ্যাপল, স্যামসাং ও লাভার শীর্ষ নির্বাহীরা। এরপর থেকে বিভিন্ন স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ভারতে ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রম জোরদারে গুরুত্বসহ কাজ করছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার হলেও অ্যাপলের জন্য বড় বাজার নয়। বার্ষিক মোট উৎপাদিত আইফোনের খুব সামান্য অংশ ভারতে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপল মূলত ভারতকে ডিভাইস উৎপাদন ও রফতানি হাব হিসেবে দেখছে। বিভিন্ন কারণে চীন থেকে উৎপাদন কার্যক্রম সরাতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে ভারত।