চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করেছে বিশ্ব। বাংলাদেশও খুব একটি পিছিয়ে নেই। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রসরমান। ফাইবার অপটিক্স এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পর্যায়ের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে ইন্টারনেটের সংযোগ বিহীন কোন ইউনিয়ন,চর বা দ্বীপ থাকবে না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ দরকার আমরা সেই ব্যান্ডউইথের ব্যবস্থা করেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিও চলমান। প্রথম তিনটি শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের সম্পৃক্তটা না থাকলেও এই শিল্প বিপ্লবে আমরা এগিয়ে থাকবো বলেই আমার বিশ্বাস।
৭ জুন (রবিবার) সন্ধ্যায় আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর যৌথ আয়োজনে ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলিশন’ শীর্ষক অনলাইন প্রশিক্ষন কর্মসূচিতে প্রথম অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অনেক নতুন প্রযুক্তি আমরা শেষ দশকে দেখতে পেয়েছি। কম্পিউটারের আগমন এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির জন্ম প্রায় একই সময়ে এই দেশে শুরু হয়। তারপর থেকে আমাদের এগিয়ে চলা। বর্তমানে প্রচলিত হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দিয়ে প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের দিন কাটলেও সেই দিন আর বেশি দুরে নেই। যেদিন ক্রেতা এসে বলবেন, আমাকে এই মডেলের একটা রোবট দেন তো। অথবা এই ধান ক্ষেতে একটি আইওটি ডিভাইস সংযুক্ত করে উৎপাদন ব্যবস্থা সচল করে দেন। এখন সরকারের কোন কাজ পরে থাকে না। কোন মিটিং বন্ধ থাকে না। দেশে কোন কিছুই বন্ধ নেই। করোনাকালীন এই সময়েও আমরা ডিজিটালি সব কাজ করে যাচ্ছি। ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ইন্টারনেট এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়। শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে এমন কোন খাত নেই যেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহার নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। নিজেদের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যকেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করে তুলতে হবে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এর কো-অর্ডিনেটর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ.এইচ.এম. শফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সমসাময়িক বিষয়গুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে যদি আমরা খাপ খাইয়ে না চলতে পারি তাহলে মূলত আমরা ট্রেন মিস করবো। এই মিসের ফলে আমরা বহুদুর পিছিয়ে যাবো। কোভিড-১৯ রোগের কারণে আমাদের এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা অতিক্রম করতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প অন্যতম হাতিয়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সেজন্যই আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। বিসিএস সদস্যদের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা উচিৎ। এখন প্রযুক্তি পরিবর্তনের যুগ। আজ যে ডিভাইসটি হালনাগাদ হয়ে এসেছে কাল সেটি পুরনো। তাই আইসিটি বিপ্লবের যুগে প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে এধরনের কর্মসূচির আয়োজন আরো হবে। বিসিএস সদস্যরাসহ সকল দর্শনার্থীরা আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেকে উপকৃত হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। বিসিএসকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, প্রথম তিনটি শিল্প বিপ্লব আমরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ না করলেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের সামনে দৃশ্যমান। আমরা সৌভাগ্যবান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আমরা শুধু দর্শক নই। এই বিপ্লবে আমাদের অংশগ্রহণ যেন উল্লেখযোগ্য হয় সেজন্য আমাদের চেষ্টা চলমান। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে বিশ্বে প্রতিদিন ২০ হাজার ৭০০ কোটি ইমেইল পাঠানো হয় এবং ৪২০ কোটি সার্চ গুগলে করা হয়। করোনা সংকটের এই সময়ে এই সংখ্যাগুলো বহুগুণে বেড়েও গেছে। এটাই ডিজিটাল দুনিয়ার শক্তি। বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসে আমরা দেখেছি রোবোটিক্স শিল্প, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটিসহ নিত্যনতুন বিষয়গুলোর সাথে মানুষের সখ্যতা কিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যত যুগে এই ধরণের প্রযুক্তির সঙ্গেই আমাদের চলতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এই সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে আমরা এই বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করে মূলত এই বিপ্লবে আমাদের কী করণীয় তা নিয়েই আলোকপাত করবো। বিসিএস সবসময় এই সংগঠনের সদস্যদের প্রযুক্তি বিষয়ে হালনাগাদ রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং পদক্ষেপ হাতে নিয়ে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কার্যপ্রণালী সাজিয়েছি। ভবিষ্যতে নিত্যনতুন বিষয়ে আমাদের এই প্রশিক্ষণ চলমান থাকবে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করেন বিসিএস এর প্রাক্তন মহাসচিব এবং দি কম্পিউটার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আতিক-ই-রব্বানী বি-টেক (অনার্স), ইউকে, এফসিএ।।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিয়ে আতিক-ই-রব্বানী বলেন, মানুষের উদ্ভাবনী দক্ষতা থেকে মেশিনের যাত্রা শুরু হয়েছে। এখন মানুষ এবেং মেশিনের উদ্ভাবনী দক্ষতা থেকে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এগুচ্ছে এবং আরো ধাবিত হচ্ছে। মানব জাতির মনুষ্যত্বের চেয়ে মানব জাতির উদ্ভাবনী শক্তি বেশি। বাষ্পচালিত ইঞ্জিন দিয়ে প্রথম শিল্প বিপ্লবের শুরু। বিদ্যুৎ আবিষ্কার থেকে শুরু করে আমরা এখন তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কানেকটিভিটি বা যোগাযোগ। ১৭৬০,১৮৭০, ১৯৫০ এই বছরগুলো শিল্প বিপ্লবের বছর। আমরা এখনো তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করে যাচ্ছি। অধ্যাপক ক্লাউস সোয়াব সর্বপ্রথম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলেন। এখানে প্রযুক্তির ছড়াছড়ি। এটি থামার নয়। মানুষ বরাবরই আবিষ্কার প্রিয়। আপনি মানুষকে বন্দী করে রাখতে পারবেন না। মানুষ সীমাবদ্ধতা পছন্দ করে না। সীমাবদ্ধতার সীমা থেকে উত্তোরণের পথ খুঁজতে মানুষের চেষ্টা প্রতিনিয়ত চলমান থাকবে। জীবনের মান উন্নত করতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
আড়াই ঘণ্টার সেশনে তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে দর্শনার্থীদের একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করেন।
বাংলাদেশে ৫জির প্রেক্ষাপট এবং প্রস্তুতি নিয়ে টেলিটকের সহকারি সাধারণ পরিচালক (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ রেজাউল করিম রিজভী প্রশিক্ষন কর্মসূচিতে একটি বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেন।
বিসিএস যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন এর সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, পরিচালক মো. রাশেদ আলী ভূঁঞাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতীম দেব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সোহেল শেখ, এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তাফিজুর রহমান, জাপান থেকে ব্যরিষ্টার অনুপ, বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি এবং জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে এসএম ইকবাল, ফয়েজউল্ল্যাহ খান, কামরুল ইসলাম, শাফকাত হায়দার, আহমদ হোসেন জুয়েল, এএসএম আব্দুল ফাত্তাহ, নাজমুল আলম ভূঁইয়া জুয়েলসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। অনলাইনে প্রায় তিন শতাধিক বিসিএস সদস্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি বিসিএস এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়। এসময় প্রায় ৪ হাজার দর্শনার্থী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপভোগ করেন। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির লাইভ স্ট্রিমিং সহযোগী টেকুজমডটটিভি।