নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ফলে ঘরবন্দি মানুষের বড় একটা সময় কেটেছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। লকডাউনের মধ্যে প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা আর ব্যবসায়িক প্রয়োজনসহ পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এ সময় ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ জুমের ব্যবহার বেড়েছে বহু গুণ। তবে ভিডিও অ্যাপটি মার্কিন-চীন দ্বৈরথের মধ্যে উভয় সংকটে পড়েছে। দেশ দুটোর মধ্যে চলা সাপে-নেউলে সম্পর্কে এমনিতেই নাকাল বৈশ্বিক বাণিজ্য। এরই মধ্যে বেইজিংয়ের সঙ্গে খুব বেশি দহরম-মহরম সম্পর্কের অভিযোগ তুলেছে ওয়াশিংটন। ফলে বৈশ্বিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে উভয়ের মন জয় করে চলতে এ রাজনৈতিক বিরোধ থেকে নিজেদের বাঁচাতে লবিস্ট নিয়োগ করেছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। খবর রয়টার্স।
কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে জুম অ্যাপের চাহিদা বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে চীনে ভিডিও অ্যাপটির ব্যবহারে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়। সেন্সর টাওয়ার নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু চীনেই গত জানুয়ারি থেকে অ্যাপল মোবাইলে অ্যাপটি ৫৪ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ গুণ বেশি। এটা চীনের মতো বড় বাজারে অ্যাপটির চাহিদার উল্লম্ফনের চিত্র নির্দেশ করে। ফলে জুম অ্যাপের বড় একটি বাজার চীন।
এরই মধ্যে চলতি মাসে বেইজিংয়ের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র ও হংকংয়ের তিনজন কর্মীর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় জুম কর্তৃপক্ষ। যারা ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের বিক্ষোভের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছিল। জুম অ্যাপের মাধ্যমে এটি আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। তবে চীন সরকার এটি মোটেই ভালোভাবে নেয়নি। এ কারণে জুমকে অনুরোধ করে এসব কর্মীর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় বেইজিং।
অন্যদিকে এ ঘটনার জেরেই চলতি সপ্তাহে জুম অ্যাপের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের পক্ষে অতিমাত্রায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন কয়েকজন মার্কিন আইনপ্রণেতা। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন-চীন রাজনৈতিক দ্বৈরথের মাঝে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কোম্পানি জুম কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব কর্মীর অ্যাকাউন্ট আবার চালু করা হয়েছে। এছাড়া এখন এগুলো সক্রিয় রয়েছে। আর ভবিষাতে এমন ধরনের অনুরোধ বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য তারা নতুন প্রক্রিয়া নিয়ে আসছে। তিনজন মার্কিন আইনপ্রণেতা জুমের অবস্থান পরিষ্কার করার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন বক্তব্য দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
তবে আপাতত জুম অ্যাপের এমন বক্তব্যে সৃষ্ট ঘোলাটে পরিস্থিতি সহসাই ঠিক হচ্ছে না। এজন্য হোয়াইট হাউজের চক্ষুশূল না হতে জুম কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এ লবিস্ট বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ট্রাম্পের সাবেক নির্বাচনী প্রচারণার কর্মকর্তা ও হোয়াইট হাউজের একজন সাবেক কর্মকর্তা।
জুম কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা আমেরিকান কন্টিনেন্টাল গ্রুপের ডেভিড আরবানকে তাদের লবিস্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। যিনি পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া আগামী নির্বাচনেও তিনি অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আছেন। এছাড়া ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা লে. জেনারেল এইচআর ম্যাকমাস্টারকে এ বোর্ডে রাখা হয়েছে।
এর বাইরে মেহেলম্যান ক্যাসটাগনেটি, রোজেন অ্যান্ড থমাস, কোয়েন গ্রুপের মতো লবিং ফার্মও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো এসব প্রতিষ্ঠান মুখ খোলেনি।