নভেল করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে শিল্প উৎপাদন ও রফতানিতে জোর দিচ্ছে ভারত। যার অংশ হিসেবে দেশটির হ্যান্ডসেট শিল্পে বড় আকারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সেটি হলো ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটি থেকে বিশ্ববাজারে ১০ হাজার কোটি ডলারের সমান মোবাইল ফোন রফতানি করা। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আরো ৪ হাজার কোটি ডলারের মতো খাতসংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি রফতানি করা। কভিড-১৯ সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে আবারো বাজার ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইন্ডিয়া সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশন (আইসিইএ)। খবর রয়টার্স।
অন্যদিকে এ লক্ষ্যমাত্রাকে বাস্তবায়ন করতে নেয়া হয়েছে নীতি সহায়তা। কারণ মোবাইল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি উৎপাদনের মাধ্যমে আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ভারত থেকে রফতানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে আসার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। হ্যান্ডসেট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, আর এর জন্য অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করছে সরকারের ন্যাশনাল পলিসি অন ইলেকট্রনিক্স (এনপিই-২০১৯) এবং সম্প্রতি সরকার ঘোষিত উৎপাদনে যুক্ত থাকা প্রণোদনা স্কিম বা পিএলআই।
আইসিইএ মূলত অ্যাপল, মটোরোলা, নকিয়া, ফক্সকম, উইসট্রোন, লাভা, ভিভো এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের মোবাইলের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কভিড-১৯-এর ফলে টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে মহামারী-পরবর্তী উৎপাদন ও রফতানি নিয়ে বৃহৎ পরিকল্পনাকারী শিল্পের মধ্যে ভারতে মোবাইল হ্যান্ডসেট খাতই প্রথম। যারা ২০২৫ সালকে লক্ষ্য ধরে কার্যক্রম শুরু করেছে।
আইসিইএর চেয়ারম্যান পঙ্কোজ মহিন্দ্রো বলেন, কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী অর্থনীতি টেনে তোলার কৌশলে নেতৃত্ব দিতে ভারতের মোবাইল এবং সরঞ্জামাদি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুত। আগামী আগস্টের মধ্যে আমরা শতভাগ উৎপাদনে যাওয়ার আশা প্রকাশ করছি। আর যেহেতু পিএলআই স্কিমের আওতা বাড়ানো হয়েছে, সেহেতু বিশ্ববাজারে ভারত থেকে রফতানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। এজন্য এখন মোটেই সময় অপচয় করা যাবে না।
ইওয়াই ইন্ডিয়ার টেলিকম খাতের পরোক্ষ কর অংশীদার বিপিন সাপরা মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে পিএলআই, এসপিইসিএস এবং ইএমসির মতো প্রণোদনা পদক্ষেপ মোবাইল খাতের পুনরুত্থানে সহায়ক হবে। উৎপাদন ও বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় এগিয়ে রাখবে এবং বৈশ্বিক মোবাইল ফোনের বাজারে হিস্যা বাড়াতে সহযোগিতা করবে।
এদিকে ভারতের মোবাইল খাতের এমন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে এ বিষয়ে নকশা করেছে এ খাতসংশ্লিষ্টরা। সে অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশটির অন্যতম লক্ষ্য হলো নতুন বাজার ধরা। বিশেষ করে নর্থ আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকা ও অগ্রসর বাজারে মোবাইল ফোন রফতানি করা। কারণ এসব বাজারে এখনো ভারতের মোবাইল ফোন তেমন বাজার ধরতে পারেনি।
আর বৈশ্বিক মোবাইল ফোনের বাজারে নিজেদের আধিপত্য বাড়ানোর এ পরিকল্পনায় হাতিয়ার হিসেবে আরো বেশকিছু সুযোগ ভারতের রয়েছে বলে মনে করছে আইসিইএ ও ইওয়াই, যা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে ভারতীয় পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করবে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রম নিষ্পত্তি, বৈশ্বিক মোবাইল ফোন উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং সর্বোপরি বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের জন্য এমএনসি বিতরণকারী নেটওয়ার্ক। এর বাইরে আরো বেশকিছু কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, বৈশ্বিক বাজারে বড় আকারে সরবরাহ নিশ্চিত করে বাজার ধরা এবং প্রতিযোগিতা তৈরি, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খরচ কমিয়ে ফেলা, সর্বোপরি সক্ষমতা আরো বৃদ্ধির জন্য রাজ্যভিত্তিক অংশীদারি ব্যবস্থা তৈরি করা।
পঙ্কোজ মহিন্দ্রো মনে করেন, ভারত সরকারের নেয়া পিএলআই, এসপিইসিএস এবং ইএমসির মতো প্রকল্প যেকোনো বড় কিছু অর্জনের ভিত্তি। এটি ভারতকে বৈশ্বিক উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু তৈরির যে ভিশন নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তারই একটি অংশ। আর পিএলআই প্রকল্পের প্রভাব ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই এ খাতে দৃশ্যমান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।