ভারতে পর্ন দেখা এবং নিজের কাছে রাখা বৈধ হলেও প্রযোজনা, প্রকাশনা এবং সরবরাহ করা অবৈধ। যদিও এই আইনের বাস্তব প্রয়োগ নেই। ২০১৯ সালে ভারত সরকার জনপ্রিয় পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করে রেখেছিলো যাতে মানুষ সেগুলোতে ঢুকতে না পারে কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। করোনাভাইরাস লকডাউনের সময়ে ভারতে পর্নোগ্রাফির দর্শক সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে। বিশেষ করে শিশু পর্নোগ্রাফি, শিশুদের উপর যৌন হেনস্থার ছবি, ভিডিও দেদার ঘুরছে অনলাইনে।
সাইবার জগতের এই অন্ধকারময় অপরাধের তালিকায় কেরালাই রয়েছে সামনের সারিতে। কেরালা পুলিশের তদন্তের রিপোর্ট বলছে, লকডাউনের এই সময়টাতেই রাজ্যটিতে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি মেটিরিয়ালের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ১২০ শতাংশ।
শিশুদের উপর যৌন নিপীড়ণ, অত্যাচার, ধর্ষণের ছবি, ভিডিও তথা ‘চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ মেটিরিয়াল’ (সিএসএএম) অনলাইনে আপলোড করা এবং শিশুদের দিয়ে নীল ছবি বানানোর বড়সড় চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে কেরালায়। এর আগেও শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল কেরালা পুলিশের স্পেশাল টিম। পুলিশ জানিয়েছিল ওই চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরে সংযোগ ছিল। শনিবার ফের এমনই একটি পর্নোগ্রাফি চক্রের পর্দা ফাঁস করেছে কেরালা পুলিশ।
অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল মনোজ আব্রাহামের নেতৃত্বে কেরালা পুলিশের স্পেশাল টিম রাজ্যের নানা জায়গায় ‘পি-হান্ট ২০.১’ অপারেশন চালাচ্ছে। চাইল্ড পর্নোগ্রাফি মেটিরিয়াল অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৮৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এডিজি মনোজ আব্রাহাম জানিয়েছেন, রাজ্যের ১১৭টি জায়গায় অপারেশন চালিয়েছে কেরালা পুলিশের ‘কাউন্টারিং চাইল্ড সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন টিম’ (সিসিএসই)। তাতেই সামনে এসেছে ভয়ঙ্কর তথ্য। পুলিশ জানাচ্ছে, লকডাউনের সময় ঘরে আটকে রেখে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। শারীরিক নির্যাতন, যৌন হেনস্থা, শিশুদের শরীরের নানা অঙ্গের আপত্তিকর ছবি, যৌন নির্যাতনের ভিডিও অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ এই কাজে সক্রিয়। অ্যাডমিনরা ছড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের নানা জায়গায়। এমনকি আন্তর্জাতিক চাইল্ড পর্নোগ্রাফি চক্রের সঙ্গেও সংযোগ রয়েছে তাদের।
‘কাউন্টারিং চাইল্ড সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন টিম’ তথা সিসিএসই-র অফিসাররা বলছেন, ভারতে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই বিভিন্ন সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে এই ধরনের ছবি ও ভিডিও আপলোড করার কাজ চলছে। কী ধরনের সফটওয়্যাল টুল ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। বেশ কিছু আইপি অ্যাড্রেস সনাক্ত করা হয়েছে যেখান থেকে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি মেটিরিয়াল অনলাইনে আপলোড হয়েছে। এই সূত্র ধরেই গোটা চক্রটাকেই ধরে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর একটি সমীক্ষা বলেছে, প্রতিদিন ১০৯ জন শিশু যৌন হেনস্থার শিকার হয় ভারতে। তাদের পরিসংখ্যান দেখে শিউরে উঠেছিল দেশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছরে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রায় ৬ গুণ বেড়েছে। চাইল্ড পর্নোগ্রাফির ক্ষেত্রেও ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান আঁতকে ওঠার মত। ৭৮১টি এই ধরণের মামলা দায়ের হয়েছিল পকসো আইনে। তারপর থেকে ক্রমান্বয়ে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনা লকডাউনের সময় শিশু পর্নোগ্রাফির চাহিদা ও অনলাইনে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি মেটিরিয়ালের সংখ্যা ভয়ানকভাবে বেড়ে গেছে।