ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট অত্যাবশ্যক উপকরণ। এই ক্ষেত্রে এটি ব্যয় নয়, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির জন্য সঠিক বিনিয়োগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, ব্লকচেইন , আইওটি ইত্যাদি ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ কখনো ব্যাহত হবে না। এই লক্ষ্যে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডিজিটাল এডুকেশন ফর বেটার বাংলাদেশ’ বিষয়ক অনলাইন সেমিনার ও ‘নর্দান ডিজিটাল ক্যাম্পেইন ২০২০’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ৬৫ ভাগ হচ্ছে তরুণ। এদের মধ্যে ৪ থেকে ৫ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার চলমান অগ্রগতি বেগবান করার জন্য শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে। বর্তমান করোনাকালকে পৃথিবীর জন্য একটি অস্বাভাবিক সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আকস্মিকভাবে এই পরিস্থিতির মুখোমুখী হয়েছি কিন্তু ডিজিটাল জীবনধারা আকস্মিকভাবে উপস্থিত হয়নি। ১৯৭৩ সালে আইটিইউ এবং ইউপিইউ এর সদস্য পদ অর্জন এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় উপ-গ্রহ ভূকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করে গেছেন। ৭৫ পরবর্তী ২১ বছরের পশ্চাৎপদতার জঞ্জাল অপাসারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন সাধারণের নাগালে পৌঁছে দেন এবং সীমিত পরিসরে বিদ্যমান ডায়াল আপ ইন্টারনেটের পরিবর্তে ভিসেটের মাধ্যমে ইন্টারনেট চালু করেন। উদ্যোগ নেন সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের। ৯২ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার বিনা টাকায় সাবমেরিন সংযোগ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেশকে পিছিয়ে দেয়। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সাল থেকে গত ১১ বছরে বিশ্বে বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছে।
দেশে ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত মোস্তাফা জব্বার প্রাথমিক শিক্ষাকে ডিজিটালাইজ করতে তিন যুগ ব্যাপী তাঁর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা এবং অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডিভাইস এবং কনটেন্ট। গত ৯ বছরে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বিজয় ডিজিটাল এর মাধ্যমে কনটেন্টের বিষয়টি সমাধান করতে পেরেছি যা অনলাইনে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ বোর্ড অব ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ, সেমিনারে সভাপত্বিত করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন, প্রবন্ধ উপস্হাপক ও বিশেষ অতিথি হিসেবে করবেন উপ-উপাচার্য (ডি) প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. হুমায়ুন কবির, সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. হাফিজ হাসান বাবু।
উল্লেখ্য, ‘নর্দান ডিজিটাল ক্যাম্পেইন ২০২০’ এর উপলক্ষে সকল শিক্ষার্থী যাতে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেজন্য ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে ফ্রি মোবাইল ডাটা প্রদান করা হয়।
মন্ত্রী ‘নর্দান ডিজিটাল ক্যাম্পেইন ২০২০’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।