ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি দ্রুত গ্রহণের সক্ষমতায় পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম ডিজিটাল দেশ হিসেবে প্রযুক্তি বিশ্বে অভাবনীয় সম্ভাবনাময় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। দেশের অসাধারণ মেধাবি তরুণরাই আমাদের সফলতার বড় শক্তি। ডিজিটাল মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসসহ প্রযুক্তির বেশকিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অগ্রদূত এবং অনুকরণীয়। ব্লকচেইন, রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং আইওটিসহ নতুন নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তিতেও একদিন আমরাই নেতৃত্বে থাকবো এবং সেদিন বেশি দূরে নয়।
মন্ত্রী গতকাল রাতে ঢাকায় ডিজিটাল প্লাটফর্ম এ বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি আয়োজিত ব্লক চেইন ইন টেলিকমিউনিকেশন্স শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়া থেকে ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন এন্ড সার্ভিসেস এলায়েন্স এর সেক্রেটারি জেনারেল ড. জেমস পয়সান্ট, ভারতের হায়দ্রাবাদ থেকে আইবিএম এর গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ চেইন হিরন শাহ, আইবিএম এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রধান ম্যাট কাডাউর বক্তৃতা করেন। বিসিএস উপদেষ্টা সাফকাত হায়দারের সঞ্চালনায় বিসিএস প্রেসিডেন্ট শহীদ মুনির এবং বিসিএস নেতা আতিক এ রাব্বানি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রী ২০২১ সালে দেশে ৫জি প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি চূড়ান্ত প্রায়। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্ক এর আওতায় আনা হয়েছে। দেশের ৩ হাজার ৮শত ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার নেট সংযোগ সম্পন্ন করা হয়েছে। ৭শত ৭৭টি ইউনিয়নে সংযোগের কাজ চলছে। দুর্গম দ্বীপ ও চরাঞ্চলে বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংযোগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় এর নেতৃত্বে দেশে ৫জি প্রযুক্তির পরীক্ষামুলক কার্যক্রম আমরা সম্পন্ন করেছি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আমরা যা ভেবেছি করোনাকালে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এর চাহিদা মানুষের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ২০০৯ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি করোনা উত্তর পৃথিবীতে জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য়।এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের সুফল যা ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক নেতৃত্বের সক্ষমতায় উপনীত করেছে। বিএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সংগঠনের চারবারের নির্বাচিত সভাপতি জনাব মোস্তাফা জব্বার বিসিএস এর তেত্রিশ বছরের পথচলায় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সংগঠনের ভুমিকা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, পঁচাত্তর থেকে ১৯৯৬ দীর্ঘ ২১ বছর প্রযুক্তি খাত মুখ থুবরে পড়েছিল। ১৯৮৭ সালে বিসিএস প্রতিষ্ঠার পর ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে কিছুটা কাজ এখাতে সীমিত পরিসরে শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৫ বছর সময় ছিলো দেশের কম্পিউটার , মোবাইল বিপ্লবের ঐতিহাসিক সময়। কম্পিউটারের ওপর থেকে শতভাগ ভ্যট- ট্যাক্স প্রত্যাহার, মোবাইল ফোনের মনোপলি বন্ধ করে সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করে দেন।
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ১৯৭৩ সালে আইটিইউ এবং ইউপিইউ এর সদস্য পদ অর্জন এবং ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের বীজ বপন করেছিলেন। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা ছিল বিশ্বে একটি বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত।
২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মধ্যদিয়ে গত এগারো বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ। তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করার ফলে নাঙ্গল জোয়ালের দেশ থেকে শতশত বছরের পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে শরীক হয়ে এরই মধ্যে উন্নত বিশ্বের সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সন্তানরা আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় সোনার মেডেল ছিনেয়ে আনছে তারা রৌপ্যপদক পাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা বীরের জাতি। চলমান ডিজিটাল বিপ্লবেও বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
মন্ত্রী ডিজিটাল প্রযুক্তিখাতে বিসিএস এর অবদান গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। রাত আটটা থেকে শুরু হয়ে দশটা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি চলে। সারা দেশ থেকে সমিতির সদস্যগণ ছাড়াও ডিজিটাল প্রযুক্তিখাত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।