মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোনের দৌরাত্ম্যে বৈশ্বিক পিসি বাজার অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। মোবাইল ডিভাইসে কম্পিউটিংয়ের সব সুযোগ-সুবিধা মিলতে শুরু করায় মানুষের মধ্যে পিসিবিমুখতা দেখা দিয়েছিল। তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পিসির বাজার। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডাটা বিশ্লেষণ করে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে লকডাউনে ঘরবন্দি থেকে মানুষ এখন বাসায় থেকে অফিসের কাজকর্ম, পড়াশোনা ও বিনোদনের জন্য পিসি ব্যবহার করছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার ও ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ মহামারীর এ পরিস্থিতির মধ্যেও চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও ওয়ার্কস্টেশন বিক্রি বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার অন্যতম কারণ মানুষ এখন বাসায় বসে কাজের পাশাপাশি ই-লার্নিংয়েও পিসি ব্যবহার শুরু করেছে।
আইডিসি মোবাইল ডিভাইস ট্র্যাকার রিসার্চ ব্যবস্থাপক জিতেশ উবরানি বলেন, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বৈশ্বিক পিসির বাজারে যে চাহিদা বাড়তে দেখা গেছে, তা মহামারী-পরবর্তী বিশ্বে স্কুল ও অফিস-আদালত খুলে দেয়ার পর থাকে কিনা, তা দেখতে হবে। বিশেষ করে মন্দার সময় মানুষ যখন খরচ কমাবে, তখন পিসির বাজার কেমন অবস্থায় থাকে, সেটি লক্ষ করতে হবে। এর ওপর নির্ভর করছে পিসি বাজারের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি।
আইডিসির তথ্যমতে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে পিসি সরবরাহ ৭ কোটি ২৩ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ১১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। বৈশ্বিক পিসির বাজারে শীর্ষে রয়েছে এইচপি। বাজারটিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে লেনোভো। ডেল ও অ্যাপল যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
অন্যদিকে গার্টনারের গবেষণা পরিচালক মিকোকো কিতাগাওয়া বলেন, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্বল্প সময়ের জন্য পিসির বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক ডিস্ট্রিবিউটর ও দোকানে পিসি আবার জমা করে রাখা হচ্ছে। তবে শিক্ষা, ব্যবসা ও বিনোদনের জন্য পিসির চাহিদা এ সময় ব্যাপক বেড়েছে। পিসির চাহিদার ধারা জুলাই পর্যন্ত চলবে। এ প্রবৃদ্ধির ধারা কতদিন অব্যাহত থাকে সেটাই দেখার বিষয়।
আইডিসির ডিভাইস ও ডিসপ্লে গবেষণা বিভাগের প্রেসিডেন্ট লিন হুয়াং বলেন, আমরা গভীর বৈশ্বিক মন্দার দিকে যাচ্ছি। পিসির চাহিদা বাড়ার যে ভালো খবর, তা শিগগিরই খারাপ হয়ে যেতে পারে।
বাজার বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, বৈশ্বিক পিসি বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে অর্থনীতির চাকা সচল করতে অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করেছে। ভয়াবহ এ মহামারীর আর্থিক ধাক্কাটা অনেক বড়। এর প্রভাব আগামীতে আরো গুরুতর হবে।