বাণিজ্যযুদ্ধের পাশাপাশি আমেরিকা-চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে একধরনের বিভেদ তৈরি হয়েছে। যেটিকে প্রযুক্তিগত স্নায়ুযুদ্ধ বললেও ভুল হবে না। এ যুদ্ধের মাঝ থেকে ব্যবসায়িক ফায়দা লুটে নিতে চায় ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (আরআইএল) টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান জিও ইনফোকম। এতদিন ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রযুক্তির বাজার ভারতে চীনা প্রযুক্তি পণ্যের আধিপত্য থাকলেও সীমান্ত বিরোধ নিয়ে দেশটিতে চলমান চীনবিরোধী মনোভাব আর ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের খারাপ সময়কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে টেনসেন্ট, হুয়াওয়ে ও শাওমির মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জায়গা দখল নিতে চায় জিও প্লাটফর্ম।
ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির এমন উচ্চাভিলাষী আকাঙ্ক্ষার পেছনে অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। একদিকে আরআইএলের ঋণের বোঝা কমাতে একের পর এক জিও প্লাটফর্মে বিলগ্নীকরণ, অন্যদিকে বৈশ্বিক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ব্যবসায়িক অবস্থা আরো পাকাপোক্ত করতে গত কয়েক মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছেন ভারতীয় এ ধনকুবের। এজন্য এরই মধ্যে জিও প্লাটফর্মের ২৫ দশমিক ২৪ শতাংশ মালিকানা বিক্রিও করে দিয়েছেন তিনি। ১২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে মালিকানা বিক্রির মধ্য দিয়ে আরআইএলের সম্মিলিত আয় দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩১৮ কোটি ৪৫ লাখ রুপি। আর সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল ও ফেসবুক এ বিনিয়োগকারীর তালিকায় রয়েছে, যা প্রযুক্তির বাজারে আরআইএলের নেতৃত্বকে পোক্ত করতে সহযোগিতা করবে।
টেনসেন্ট, হুয়াওয়ে ও শাওমির মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জায়গা দখল নেয়ার এ উচ্চাভিলাষকে অনেকটা দুঃসাহসিকই বলা চলে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, সাহসের শক্তি হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে চীনের প্রযুক্তি পণ্যবিরোধী মনোভাব। দেশ দুটি ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশ হুয়াওয়ের টেকনোলজি কোম্পানিকে তাদের দেশে অনুমতি দিতে নারাজ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত মিত্র দেশগুলোকে নিজেদের দলে ভেড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে মার্কিন-চীন এ প্রযুক্তিযুদ্ধ মুকেশ আম্বানির জন্য বাড়তি পাওনা হিসেবেই কাজ করছে।
এদিকে গত বুধবার আরআইএলের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সভায় নিজস্ব ফাইভজি প্রযুক্তি নির্মাণের কথা জানিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। জিও প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠার চার বছর পর ফাইভজি চালুর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সভায় জানানো হয়, ভারতে তাদের ৪০ কোটি ফোরজি গ্রাহকের ওপর পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর অন্যান্য বাজারে ফাইভজি চালু করবে জিও প্লাটফর্ম। যেখানে অন্যান্য দেশে হুয়াওয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি চালু করতে গিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
আম্বানির মালিকানাধীন গণমাধ্যম নিউজ ১৮ জিও প্লাটফর্মের ফাইভজি প্রযুক্তিকে ‘হুয়াওয়ে কিলার’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে চাইনিজ গিয়ারকে এড়িয়ে ফাইভি চালুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জিও প্লাটফর্মকে প্রশংসা করার বিষয়টিও উঠে এসেছে গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে। এর অর্থ চীনা প্রযুক্তিকে টেক্কা দিয়ে জিও প্লাটফর্মের ফাইভজি চালুর বিষয়টিকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
মুকেশ আম্বানির উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পেছনে এসব কেবল একক কারণ নয়। এর মধ্যে অন্যতম বৈশ্বিক টেলিকম জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংযুক্তি। যেমন জিও প্লাটফর্মে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগে শীর্ষে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্ট ফেসবুক। প্রায় ১০ শতাংশ মালিকানা কিনেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। আর এজন্য ৫৭০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ফেসবুক। এর মধ্য দিয়ে ফেসবুক নিয়ন্ত্রিত ক্রস-প্লাটফর্ম মেসেজিং ও ভয়েস ওভার আইপি সেবা হোয়াটসঅ্যাপ জিও প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হলো। সূত্র: ব্লুমবার্গ