মোবাইল ফোনের সক্রিয় সংযোগ সংখ্যা কমছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরে ধারাবাহিক পতন দেখা যাচ্ছে। মার্চ থেকে মে পযন্ত গত তিন মাসে সংযোগ কমেছে প্রায় ৫০ লাখ। সেই সঙ্গে এ সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কমেছে।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মে মাসে দেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ১৫ লাখ ৬ হাজার। লকডাউন শুরুর আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির শেষে সংযোগ সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার। সেই হিসাবে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসে সংযোগ সংখ্যা কমেছে ৪৬ লাখ ৮ হাজার।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্চে মোবাইল সংযোগ ছিল ১৬ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজারটি। আর এপ্রিলে ছিল ১৬ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার।
বিটিআরসি সাবস্ক্রাইবার বা গ্রাহকের সংজ্ঞায় বলেছে, সর্বশেষ ৯০ দিনের মধ্যে অন্তত এক দিন সক্রিয় (ভয়েস, ডাটা, এসএমএস ইত্যাদি) ব্যবহারকারীকেই সাবস্ক্রাইবার বা সাবস্ক্রিপশন হিসেবে গণ্য করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেলফোন এখন সব ধরনের ব্যবসা, শিক্ষা, বিনোদন ইত্যাদির প্রাথমিক যোগাযোগের মাধ্যমে হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও গত ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ থেকেই গ্রাহক সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। দেশের অন্যান্য ব্যবসা যখন প্রভাবিত হয় তখন তা মোবাইল খাতকেও প্রভাবিত করে, এমনটাই মনে করছেন তারা। বিশেষ করে লকডাউনের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। খুচরা দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক গ্রাহক রিচার্জ পয়েন্টে যেতে পারছেন না। এমন নানা বাধার কারণে একদিকে নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন না, পাশাপাশি অনেক গ্রাহক নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। আবার যারা একাধিক সিম ব্যবহার করতেন খরচ কমাতে শুধু জরুরি যোগাযোগের সিমটিই ব্যবহার করছেন।
মোবাইল অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারির তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। মার্চে কিছুটা বাড়লেও এপ্রিলে তা কমে যায়, আবার মে মাসে কিছুটা বাড়ে। তবে মার্চের তুলনায় মে মাসের মোট গ্রাহক কমই ছিল।
সে হিসাবে দেখা গেছে, গত তিন মাসে অপারেটরগুলোর ২ লাখ ৮ হাজার গ্রাহক কমেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারকারীরর সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার। মার্চে লকডাউনের সময় তা বেড়ে হয় ৯ কোটি ৫১ লাখ ৬৮ হাজার। এপ্রিলে প্রায় প্রায় ২০ লাখ গ্রাহক কমে তা দাঁড়ায় ৯ কোটি ৩১ লাখ ১ হাজারে। মে মাসে গ্রাহক কিছু বাড়ে। এ মাসে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৪০ লাখ ২৮ হাজার। ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল গ্রাহকের তুলনায় মে মাসে এসে কমেছে ২ লাখ ৮ হাজার গ্রাহক। মার্চ ও এপ্রিল মাসে গ্রাহক সংখ্যা ওঠানামা করেছে।
মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পরিসংখ্যানেও অনেকটা একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও পরবর্তী তিন মাসে ওঠানামার মধ্যে থেকেছে। বিটিআরসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মোট ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার, মার্চে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার, এপ্রিলে ১০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার এবং মে মাসে তা ১০ কোটি ২১ লাখ ১৩ হাজারে দাঁড়ায়।
এই ওঠানামার পেছনেও আর্থিক সঙ্কট এবং রিচার্জ পয়েন্টগুলো বন্ধ থাকা বা রিচার্জ পয়েন্টে যেতে বাধাকেই কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।