বিরূপ পরিস্থিতিতেও থেমে থাকেননি দেশের নারী উদ্যোক্তার। যাঁরা নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ভূমিকায় নিজেদের দাঁড় করিয়েছেন। এমন একজন নবীন উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প আজ তুলে ধরা হচ্ছে।
মাদারীপুরে জন্ম শাহানা আক্তার শিমুর। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে বড় হয় নানির স্নেহে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ্য ন্যাশনাল কলেজ অফ হোম ইকোনমিকস থেকে শিশু বন্ধন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ে অর্নাস ও মাষ্টার্স শেষ করে শাহানা। বর্তমানে স্বামী সন্তান নিয়ে বাস করেন রাজধানীর মিরপুরে।
ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন বেসরকারি এনজিও তে। নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ ১১ বছরের চাকরি ছেড়ে নতুন সিদ্ধান্তে পৌছেন শাহানা। মাত্র ৪ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু করেন উদ্যোক্তা জার্নী। ব্লক ও বাটিকের প্রতি ছিলো তার প্রচুর আগ্রহ, তাই নিজের উদ্যোগ শিমু’স কালেকশনে যুক্ত করেন ব্লক ও বাটিক। কাপড়রে মান নিয়ে নিজের মধ্যে সংশয় থাকায় ২০১৫ সালে নিজস্ব সোর্সের কাপড় ডিজাইন শুরু করেন শাহানা।
ই-কমার্স উদ্যোক্তা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে শাহানা বলেন, ছোটবেলা বাবা-মাকে হারিয়ে বুঝতে পারি মায়ের অভাব, তাই নিজের একমাত্র পুত্র সন্তানকে সময় দেওয়া এবং স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা ছিল ই-কমার্স ক্যারিয়ারের অন্যতম কারণ। এখন ঘরে বসে পরিবারের দেখাশোনা, সন্তানকে দেখা শোনা এবং যেকোন জায়গায় বসে ব্যবসায় সময় দিতে পারছি রাতদিন।
ব্লক ও বাটিকের প্রতি ভালোবাসা এবং ব্লক শিল্পে নিজের অবদান রাখতে শাহানা শুরু করে শিমু’স কালেকশন। নিজস্ব টেইলারিং সার্ভিস ও ডিজাইনের মাধ্যমে প্রস্তুত করেন প্রতিটি প্রোডাক্ট। গত ছয় বছর যাবৎ সুনামের সাথে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবী এবং বেবি প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন শাহানা। দেশের পাশাপাশি ২০১৬ সাল থেকে বিদেশে যাচ্ছে শিমু’স কালেকশনের পণ্য। ব্লক ইন্ড্রাস্টিতে শিমু’স কালেকশনকে সুপরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত করা শাহানার স্বপ্ন।
উদ্যোক্তা জীবনের চ্যালেঞ্জ গুলো জানতে চাইলে তিনি জানান, মেয়ে হয়ে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তার হওয়া মসৃণ ছিল না। প্রতিটি পদে পদে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করত হয়েছে। পারিবারিক বাধা, পর্যাপ্ত অর্থ সংকট, ই-কমার্স নলেজ, মানসম্পন্ন প্রোডাক্ট সোর্সিং, বিদেশি পণ্যের সাথে দেশি পণ্যের প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে আগাতে হয়েছে।
উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর অবদান স্বীকার করে শাহানা বলেন, দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের জন্য ঢাল স্বরূপ উই। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। উইয়ের সাথে আমার পথচলা প্রায় একবছর। বাংলা ভাষায় ই-কমার্স জ্ঞান অর্জনের সেরা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আমাদের চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করতেও দারুণ ভাবে ভূমিকা রাখছে। উইয়ের মাধ্যমে ই-কমার্স ট্রেনিং, নেটওয়ার্কিং ডেভেলেপ ও বিক্রি করতে পারছি, শুধু মাত্র সময় ইনভেস্ট করে। আমি কৃতজ্ঞ উই এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু এবং ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও উইয়ের এডভাইজর রাজিব আহমেদ স্যার এর কাছে, যারা আমাদের প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ ও সুবিধা নিয়ে জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।