বিপদে নারী ও শিশুদের জরুরিভাবে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে গত বছর একটি বিশেষ অ্যাপ চালুর কার্যক্রম গ্রহণ করে বাংলাদেশ পুলিশ। এটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। অ্যাপটির নাম নির্ধারণসহ পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) অনুমোদন পেলেই চালু হবে নতুন এই সেবা। এর মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা-নিপীড়ন বন্ধে বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মোবাইল ফোনে এই অ্যাপের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় নারী-শিশুরা একটি বাটন টিপে সংকেত দিতে পারবে। পুলিশের প্রযুক্তি বিভাগের মাধ্যমে সবচেয়ে কাছে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ওই নারী বা শিশুর অবস্থান জেনে যাবেন এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাবেন। অনলাইনের পাশাপাশি ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের বাইরে (অফলাইন) থাকলেও এই বিশেষ বাটন দিয়ে সেবা নেওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে অ্যাপটির নাম রাখা হয়েছিল ‘রোকেয়া’। পরে সেটি পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘আশ্রয়’। নাম চূড়ান্তসহ আইজিপির অনুমোদন পেলেই চালু হবে এই সেবা। ফলে ছিনতাই, অপহরণ, বাল্যবিয়ে, যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, ইভ টিজিং, ধর্ষণসহ যেকোনো ধরনের সহিংসতা-নির্যাতন বন্ধে এই অ্যাপ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষেই অ্যাপটি চালুর পরিকল্পনা আছে। এরই মধ্যে অ্যাপটি অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। গুগল প্লেস্টোরে সার্চ দিলে এটি পাওয়া যাচ্ছে। অনুমোদনের পর পুলিশের সার্ভারে যুক্ত করে ব্যবহারের জন্য অবমুক্ত করা হবে অ্যাপটি।
তাঁরা জানান, অ্যাপটি অত্যন্ত সহজভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন লেখাপড়া না জানা নারীরাও ব্যবহার করতে পারেন, শিশু-কিশোরীরাও যেন সহজে বুঝতে পারে এর ব্যবহার। বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ইনোভেশন শাখা এটি তৈরি করেছে।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপদির্শক (এআইজি ইনোভেশন) নেসারউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘অ্যাপটি যাঁর ফোনে থাকবে, তিনি একটি সুইচে চাপ দিলেই সবচেয়ে কাছের, অর্থাৎ ওই এলাকার বিট পুলিশ অফিসার এবং থানায় ফোনে কল চলে যাবে। এই কলটি সাধারণ কলের চেয়ে অনেক বেশি শব্দে বাজবে। পুলিশ কর্মকর্তা স্ক্রিনে বিপদগ্রস্তের অবস্থান দেখতে পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় নারীরা বিব্রতকর অবস্থায় সমস্যার কথা বলতে চান না। এ কারণে হেল্প বাটনে চাপ দিলেই হবে। অ্যাপে পরিবারের বা ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে যুক্ত করা যাবে। ফলে স্বজনদের কাছেও বিপদে পড়ার কল যাবে।’ নামও চূড়ান্তসহ আইজিপির অনুমোদন পাওয়ার পরপরই এটি চালু হবে জানান তিনি।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘অনেক আধুনিক ফিচারের অ্যাপটি আপডেট করা সম্ভব। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও এটি কাজ করবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ‘যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক আলোচনা ও পোস্টার প্রদর্শনী’ অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানি বন্ধে নারীর জন্য অ্যাপ চালুর প্রস্তাবটি বিশেষভাবে উচ্চারিত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে একই দাবি ছিল।