দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং মার্কিন টেলিকম ক্যারিয়ার ভেরাইজনের ফাইভজি নেটওয়ার্কের জন্য প্রয়োজনীয় ওয়্যারলেস সরঞ্জাম সরবরাহে ৬৬০ কোটি ডলারের (৭ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ওন) একটি চুক্তি পেয়েছে। এ চুক্তিকে মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের জন্য বড় ধরনের সুযোগ হাতছাড়া হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম খাতে নকিয়া ও এরিকসনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্যামসাংয়ের অবস্থান দৃঢ় করার ইঙ্গিত মনে করা হচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ।
বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ধরনের ফাইভজি চুক্তির নিলামে অংশ নিতে পারছে না হুয়াওয়ে। ট্রাম্প প্রশাসনের হুয়াওয়েকে ফাইভজি প্রকল্প থেকে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত স্যামসাংয়ের জন্য নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণের পথ অনেকটা সহজ করেছে। এদিকে তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বী নকিয়া ও এরিকসনের জন্য ভেরাইজন ও স্যামসাংয়ের চুক্তিকে অশনিসংকেত মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আগস্টে নকিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব নিয়েছেন পেকা লুন্ডমার্ক। এর পরই ভেরাইজনের ফাইভজি চুক্তি হারানোর তথ্য সামনে এল। অবশ্য সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, নকিয়ার নতুন সিইও দায়িত্ব নেয়ার আগে থেকে ভেরাইজনের ফাইভজি চুক্তি নিয়ে একাধিক ভেন্ডরের সঙ্গে দরকষাকষি চলছিল।
এ বিষয়ে নকিয়ার এক মুখপাত্র বলেন, ভেরাইজনের থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক নির্মাণে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছি এবং ফাইভজি উদ্ভাবনের গতি বাড়াতেও আমরা তাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব। গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ তিন নম্বর টেলিকম ক্যারিয়ার ভেরাইজন।
বাজার বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান লিবেরামের বিশ্লেষক জানার্দান মেনন বলেন, ভেরাইজন ও স্যামসাংয়ের চুক্তির কারণে ফাইভজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো একই হারে বিনিয়োগের ক্ষমতা হারাতে পারে নকিয়া। একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে এরিকসনও।
বিশ্লেষকরা আগেই জানিয়েছিলেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের ডামাডোলে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমেছে হুয়াওয়ের ওপর। এতে স্যামসাংয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাজার সম্প্রসারণের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্মার্টফোনের পাশাপাশি ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক বাজারে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা দেখছে ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিং।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর সার্চ জায়ান্ট গুগল ও সফটব্যাংক গ্রুপের মালিকানাধীন চিপ ডিজাইনার প্রতিষ্ঠান এআরএম হুয়াওয়েকে সরঞ্জাম সরবরাহ ও হালনাগাদ দেয়া স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এ দুই প্রধান সহযোগীর এমন ঘোষণায় হুয়াওয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছিল। কারণ হুয়াওয়ের বেশির ভাগ নিজস্ব চিপ এআরএমের সহযোগিতায় নকশা করা।
ফিচ রেটিং জানিয়েছে, গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চীনের বাইরে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি ব্যাহত হচ্ছে। এ সুযোগেই স্যামসাংয়ের বাজার অংশীদারিত্ব বাড়তে পারে।
শুধু হুয়াওয়ে নয়; ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্যযুদ্ধে আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেখানে এরই মধ্যে চীনে অ্যাপলের বাজার অংশীদারিত্ব কমতে শুরু করেছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে অ্যাপলের পণ্যে চীনে বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষপাতী নন বলে জানিয়েছেন হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেন ঝেংফেই।