ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও তথ্যবিকৃতির মাধ্যমে দেশে দেশে ভোটের রাজনীতির নোংরা খেলায় নিজেদের প্লাটফর্ম ব্যবহৃত হতে দেখেও হাত গুটিয়ে বসে ছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। অথবা বারবার অভিযোগের পরও তারা ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরি করে ফেলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চুপচাপ কিছু ভুয়া অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেই দায় সেরেছে।
অকাট্য তথ্যপ্রমাণসহ এমন বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন ফেসবুকের সাবেক এক কর্মকর্তা। ফেসবুকের ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে তিন বছর কাজ করা সোফি ঝ্যাং নামে এই কর্মকর্তা সম্প্রতি ৬ হাজার ৬০০ শব্দের এক অভ্যন্তরীণ মেমো উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। মেমোটিসহ এই খবর প্রকাশ করেছে বাজফিড নিউজ। তবে বাজফিডের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সে ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সোফির দাবি, ভারত, ইউক্রেন, স্পেন, ব্রাজিল, বলিভিয়া এবং ইকুয়েডরে রাজনৈতিক প্রার্থীদের সুবিধা পাইয়ে দিতে বা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে লাগাতার অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তথ্যবিকৃতি ঘটানো হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি ভোটেও এমনটি ঘটেছে প্রায় কর্তৃপক্ষের গোচরেই। তবে এসব ক্যাম্পেইনের পেছনে কারা কাজ করেছে সে ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি সোফি।
সোফি আরো বলেন, তার সুপারিশে দেরিতে হলেও ভারতের বিপজ্জনক ওই ‘আইটি সেল’-কে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল। তবে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ওই নেটওয়ার্ককে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করেনি ফেসবুক। কর্মীদের চাপে কিছু পোস্ট বা ভুয়া অ্যাকাউন্ট চুপচাপ মুছে ফেলেই দায় সেরেছিল কর্তৃপক্ষ।
সোফির অভিযোগ, বারবার রিপোর্ট করা সত্ত্বেও কিছু দেশের ক্ষেত্রে এটুকুও করা হয়নি। উল্টো এক সিনিয়র তাকে বলেন, সামান্য ব্যাপারে বেশি মাথা ঘামাবেন না। মিডিয়া কিংবা পাবলিক হইচই করলে, ব্যবস্থা নেয়া হবে ঠিকই।
সোফি গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি না হলেও তার লিঙ্কডইন প্রোফাইলের বরাত দিয়ে বাজফিড জানিয়েছে, তিনি ফেসবুকের সাইট ইন্টেগ্রিটি ফেক ম্যানেজমেন্ট টিমের ডাটা সায়েন্টিস্ট ছিলেন। ফেসবুকে ‘বটের (স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম) মাধ্যমে নির্বাচন ও এ ধরনের বিষয় প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা’ নিয়ে কাজ করতেন সোফি।
সোফি তার মেমোতে লিখেছেন, আমাদের ব্যবহার করে ভোটের সময়ে বড় বড় সব রাষ্ট্রনেতা কীভাবে নিজেরই নাগরিকদের লাগাতার বিভ্রান্ত করেছেন, তিন বছর তার এমন বেশুমার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
সোফি তার মেমোতে তথ্যপ্রমাণসহ দেখিয়েছেন কীভাবে হুন্ডুরাস ও আজারবাইজানের ক্ষমতাসীনরা ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও তথ্যবিকৃতির মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। পাশাপাশি ভারত, ইউক্রেন, স্পেন, বলিভিয়া এবং ইকুয়েডরে ভোটের সময় প্রার্থীদের পক্ষে ভোটার টানতে সমন্বিত অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
সোফি বলেন, তিনি কতোবার যে এসব নিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন তার নিজেরই মনে নেই। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই ব্যবসার স্বার্থে ফেসবুক তাদের নীতি থেকে সরে এসেছে। আর কিছু ক্ষেত্রে অনর্থক দেরি করেছে। যেমন, হন্ডুরাসের ভোটে তার টিম রিপোর্ট করার নয় মাস পর সাড়া দিয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। আর আজারবাইজানে এক বছর পরে!
সোফি জানিয়েছেন, ব্রাজিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের আগে গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক এমন দেড় কোটি অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছিল তার টিম।
সোফি লিখেছেন, এক পর্যায়ে গিয়ে আমি আমি সত্যিই ধন্দে পড়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না, কোম্পানির প্রতি দায়বদ্ধ থাকা উচিত, নাকি বিশ্বজনীন গণতন্ত্রের প্রতি! যখনই কোনো দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি দেখতাম, নিজের অক্ষমতাকে ক্ষমা করতে পারতাম না। কত রাত ঘুমোতেই পারিনি। হ্যাঁ, আমার হাতে সত্যিই বহু মানুষের রক্ত লেগে আছে!
তবে যথারীতি সোফির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ফেসবুক। কোম্পানির এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেন, যারা আমাদের কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশেষজ্ঞদের একটা কমিটি তৈরি করা হয়েছে।
সূত্র: বাজফিড নিউজ, বিজনেস ইনসাইডার