অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধে আগামী বছরের শুরু থেকে প্রযুক্তি বাস্তবায়ন শুরু করতে যাচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিটিআরসি। প্রযুক্তিটি চালু হলে গ্রাহকের হাতে থাকা এসব হ্যান্ডসেটে কোনো অপারেটরের সিমই চলবে না। নতুন ফোন ক্রয় করার সময় গ্রাহক তার ফোনের আইএমইআইর বিটিআরসি ডাটাবেজে আছে কিনা তা যাচাই করে নিতে এবং যদি আইএমইআইর বিটিআরসি ডাটাবেজে না থাকে তাহলে সেই ফোন ক্রয় থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে বিটিআরসি ।
২০১২ সালে উদ্যোগ নেওয়ার প্রায় ৮ বছর পর এই প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক জানান, “অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ করতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) প্রযুক্তি সরবরাহ ও পরিচালনার দরপত্র প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। আগামী বছর শুরু থেকে এ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হবে।”
বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালের অগাস্ট নাগাদ মোট ১১ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ৭৬৩টি আইএমইআই নম্বর ডেটাবেইজে যুক্ত করা হয়েছে। মোবাইল ফোন আমদানিকারক, অপারেটর ও দেশে হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তথ্য নিয়ে এ ডেটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে।
২০১৮ সালের আগে যেসব হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়েছে এবং আইএমইআই নম্বর ডেটাবেইজে যুক্ত হয়নি এনইআইআর চালু হলে সেগুলোর কী হবে জানতে চাইলে বিটিআরসি প্রধান বলেন, “২০১৯ সালের অগাস্টের আগে ক্রয়কৃত যেসব সেট মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্কে যুক্ত আছে সেসব হ্যান্ডসেটগুলোকে নির্ধারিত সময়ের জন্য নিবন্ধিত করার একটা সুযোগ দেওয়া হবে।”
বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট নিয়ে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, “সেক্ষেত্রে ক্রয়ের রশিদ ও আনুষঙ্গিক কাজগপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। পরবর্তীতে এনইআইর চালু হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সেসব আইএমইআই নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হবে।”
যেভাবে বন্ধ হবে অবৈধ হ্যান্ডসেট
২০১৯ সালে প্রকাশিত মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (ইআইআর) নির্দেশনায় এনইআইআরের উল্লেখ রয়েছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়া শুরু হলে অবৈধ হ্যান্ডসেটে প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট একটি সিম ছাড়া অন্য কোনো সিম কাজ করবে না। নির্দিষ্ট সময় পরে কোনো সিমই কাজ করবে না। ফলে গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধ করবেন।
সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ব্যবসায়ীদের হিসাবে, দেশে বর্তমানে প্রায় তিন কোটি অবৈধ হ্যান্ডসেট মানুষের হাতে রয়েছে।
নকল মোবাইল সেট বৈধের সুযোগ, অবৈধ আমদানি, চুরি, স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নকল হ্যান্ডসেট প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত, রাজস্ব ক্ষতি ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে আসছে বিটিআরসি।
খসড়া নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, অপারেটররা তাদের লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী সব মোবাইল হ্যান্ডসেটের ইএমআই নম্বর দিয়ে এই ডেটাবেইজ তৈরি করবে।
ইএমআই নম্বর হল ১৫ ডিজিটের একটি স্বতন্ত্র সংখ্যা, যা বৈধ মোবাইল ফোনে থাকে। একটি মোবাইল ফোনের কি-প্যাডে *#06# পরপর চাপলে ওই মোবাইল ফোনের বিশেষ এই শনাক্তকরণ নম্বরটি পর্দায় ভেসে উঠে।
অপারেটরদের ইআইআর তৈরির পর তা জাতীয় ইআইআর (এনইআইআর) এ সংযুক্ত হবে। এর ফলে সব অপারেটরদের ইআইআর খুব সহজেই নজরদারি করতে পারবে বিটিআরসি।
ইআইআর ও এনইআইআর বাস্তব সময় সিঙ্ক্রোনাইজেশন হবে অর্থাৎ ইআইআরে ডেটা সংযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা এনইআইআরে চলে আসবে।
গ্রাহকের হাতে যেসব নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট রয়েছে, এই প্রক্রিয়া শুরু করার ছয় মাস পর্যন্ত নির্দিষ্ট সিমে তা চালু রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অর্থাৎ যে সিমে মোবাইল চালু থাকবে সেই সিমের মাধ্যমেই তা নিবন্ধিত ধরে নেওয়া হবে। ছয় মাস পর কোনো নকল, অবৈধভাবে আমদানি করা বা ক্লোন হ্যান্ডসেটে সিম কাজ করবে না।
যেভাবে যাচাই করবেন হ্যান্ডসেট
বিটিআরসি বার বার সতর্কতা জানিয়ে বলে আসছে, মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে আইএমইআইর মাধ্যমে সেটটির বৈধতা যাচাই করে নিতে হবে। বিক্রেতার কাছ থেকে হ্যান্ডসেট কেনার রশিদ নিতে হবে।
মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাইয়ের পদ্ধতি হল মোবাইল ফোনের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে KYD স্পেস ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে 16002 নম্বরে পাঠাতে হবে।
মোবাইল ফোনের প্যাকেটে প্রিন্টেড স্টিকার থেকে অথবা *#06# ডায়াল করার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট হ্যান্ডসেটের আইএমইআই জানা যাবে।