শ্বের বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার চীন। গত অক্টোবরে বাজারটিতে স্মার্টফোন সরবরাহ ২ কোটি ৫০ লাখ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম। গত বছর অক্টোবরে বাজারটিতে স্মার্টফোন সরবরাহ ৩ কোটি ৪৬ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছিল। গত শুক্রবার চায়না একাডেমি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স টেকনোলজি (সিএআইসিটি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।
সিএআইসিটির তথ্যমতে, কভিড-১৯ মহামারী চীনের স্মার্টফোন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল চীনের উহান প্রদেশে। উত্পত্তিস্থল উহান হলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারী খুব দ্রুত চীনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, চীনের পাশাপাশি কল্পনাতীত দ্রুতগতিতে করোনাভাইরাস বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে চীনের স্মার্টফোন বাজারে। চীনকে স্মার্টফোন ডিভাইসের উৎপাদন হাব বলা হয়। বৈশ্বিক স্মার্টফোন জায়ান্ট স্যামসাং ডিভাইস উৎপাদনের জন্য চীন নির্ভরশীলতা কমালেও অ্যাপল এখনো সিংহভাগ আইফোন উৎপাদনের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে চীনা ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে, অপো, ভিভো ও শাওমির মতো ডিভাইস নির্মাতাদের উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। যে কারণে শুধু মাসভিত্তিক নয়; প্রান্তিকভিত্তিক স্মার্টফোন সরবরাহের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পতন দেখা গেছে।
গত সেপ্টেম্বরে চীনের বাজারে স্মার্টফোন সরবরাহ ২ কোটি ২০ লাখ ইউনিটে দাঁড়ায়, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম। গত বছর সেপ্টেম্বরে বাজারটিতে স্মার্টফোন সরবরাহ ৩ কোটি ৪৭ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছিল।
কভিড-১৯ মহামারীর কারণে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) চীনে স্মার্টফোন সরবরাহ ৮ কোটি ৪৮ লাখ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ কম। সম্প্রতি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
চীনের স্মার্টফোন বাজারে ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে হুয়াওয়ে। যদিও কভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত প্রান্তিকে কিছু প্রিমিয়াম স্মার্টফোন মডেলের উৎপাদন হ্রাস করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে সরবরাহ লক্ষ্যমাত্রা অনেকটা পূরণে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে আইডিসির এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ক্লায়েন্ট ডিভাইস বিভাগের রিসার্চ ব্যবস্থাপক উইল ওং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের নিরাপত্তা দুর্বলতার অভিযোগে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। গত আগস্টে হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরো জোরালো করা হয়, যা বৈশ্বিক বাজারে হুয়াওয়ের ডিভাইস ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেও চীনের গ্রাহকদের জোরালো সমর্থন পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যা গত প্রান্তিকে স্থানীয় বাজারে ডিভাইস সরবরাহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোন বাজারের ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ দখলে নিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে ভিভো। বিভিন্ন গ্রাহক সেগমেন্টকে লক্ষ্য করে ডিভাইস উন্মোচন স্থানীয় বাজারে প্রতিষ্ঠানটির বাজার দখল বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। তবে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ভিভোর স্মার্টফোন সরবরাহ কিছুটা কমেছে। ভিভো ৩০০ ডলার দামের ‘ওয়াই’ সিরিজের ফাইভজি ফোন দিয়ে চীনে অবস্থান দৃঢ় করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে ‘এক্স’ সিরিজের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস সরবরাহ বাড়াতে জোর দিচ্ছে।
চীনের স্মার্টফোন বাজারের ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নিয়ে তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অপো। ব্র্যান্ডটি ২০০ থেকে ৪০০ ডলার মূল্যের ফাইভজি ফোন দিয়ে বাজার আধিপত্য বাড়ানোর কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। তবে গত প্রান্তিকে এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে অপোর ডিভাইস সরবরাহেও কিছুটা ঘাটতি দেখা গেছে।
অন্যদিকে শাওমি বিশ্বের অনেক বাজারে ভালো ব্যবসা করছে। তবে চীনের বাজারের ১৩ শতাংশ দখলে নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল চীনের বাজারের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ দখলে নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে।
গত বছর ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়। এরপর ভাইরাসটি দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভাইরাসটির আতঙ্কে চলতি বছরের শুরুতে ধস নামে চীনের স্মার্টফোন বাজারে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটিতে স্মার্টফোন বিক্রি ৪০ শতাংশ কমার তথ্য মিলেছিল।