চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হুয়াওয়ে আবারো ৪৫ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে চীনের স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষে উঠে এসেছে। কভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহতার কারণে চলতি বছরের শুরুতে চীনের স্মার্টফোন বাজারে ধস নামে। তবে এখন বাজারটি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোন বাজার ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর ইন্দো এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
কাউন্টারপয়েন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রান্তিকভিত্তিক ডিভাইস সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও এক বছর আগের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দেশটি এখনো প্রাক-কভিড পর্যায়ে ফিরে আসতে পারেনি। প্রিমিয়াম পি৪০/প্রি৪০ প্রো সিরিজ, মেট ৩০ সিরিজ ও সাশ্রয়ী মূল্যের প্রিমিয়াম নোভা ৭ সিরিজসহ হুয়াওয়ের বিভিন্ন ৫জি স্মার্টফোন চীনের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ১০টি মডেলের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
কাউন্টারপয়েন্টের গবেষণা বিশ্লেষক মেনমেং ঝাং বলেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বৃদ্ধি করা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে হুয়াওয়ে মারাত্মকভাবে সরঞ্জাম সংকটে পড়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটির বিক্রিও হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোন বাজারে চতুর্থ স্থানে নেমে গেলেও সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ফোন ছিল আইফোন ১১ মডেল। যদিও অ্যাপলের সামগ্রিক বিক্রির পরিমাণ গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে ৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এমন হ্রাস পাওয়ার পেছনে অ্যাপলের নতুন আইফোন আসার খবর ভূমিকা রেখেছিল। শেষ প্রান্তিকে অ্যাপল ভালো করবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
গবেষণা বিশ্লেষক ফ্লোরা ট্যাং বলেন, ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হারের সঙ্গে ক্রমহ্রাসমান আত্মবিশ্বাসের কারণে চীনের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা ব্যয় দুর্বল ছিল। মহামারী পরবর্তী পুনরুদ্ধারের সময়কালে তৃতীয় প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও চীনের সামগ্রিক বাজার চাহিদা স্থির ছিল।
এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে এসে আরেক চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমির ১১ শতাংশ শেয়ার বেড়েছে এবং বাজার প্রবণতার বাইরে গিয়ে গত বছরের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শাওমির ফোনের ৮ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে।
অপো ও ভিভো গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে তাদের স্মার্টফোন বিক্রির তথ্য প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কিন্তু নতুন ফ্ল্যাগশিপ সিরিজের হাত ধরে আগের প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে তাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। অন্যদিকে অপো রেনো ৪ হুয়াওয়ে বাদে চীনের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ৫জি মডেলের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
কাউন্টারপয়েন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের শেষদিকে চীনের টেলিকম অপারেটররা দেশের প্রিফেকচার স্তরের শহরগুলো পুরোপুরি ফাইভজির আওতায় নিতে আসতে ৬ লাখ ৯০ হাজার ইউনিট ফাইভজি বেস স্টেশন তৈরি করেছিল। আর এ শিল্পের প্রতিযোগীদের প্রচেষ্টায় উদ্দীপ্ত হয়ে চীনে ফাইভজি স্মার্টফোন বিক্রি বাড়তে থাকে।
চীন নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল। গত বছর ডিসেম্বরের শেষদিকে দেশটিতে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়। এরপর ভাইরাসটি দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভাইরাসটির আতঙ্কে চলতি বছরের শুরুতে ধস নামে চীনের স্মার্টফোন বাজারে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটিতে স্মার্টফোন বিক্রি ৪০ শতাংশ কমার তথ্য মিলেছিল।