দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় গত ১১ বছরে গড়ে ওঠা তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামোই বর্তমানে মহামারি কাল সামাল দিতে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জরুরি সেবাসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী রূপকল্প বাস্তবায়নে আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে পাশে পেয়েছেন সুযোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে। বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে ফাইভজি চালুর প্রস্তুতিসহ ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় এবং জয় ভাইয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে এক দশক ধরে বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরে নেওয়া নানা উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে মানুষ। গত চার বছরে ডিজিটাল অর্থনীতিতে চমকপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করে হুয়াওয়ের ‘গ্লোবাল কানেকটিভিটি ইনডেক্স ২০১৯’-এর ‘টপ মুভার’ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সম্প্রতি সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, “আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েনি। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ তৈরি করছি। নজর দেওয়া হচ্ছে গবেষণার ওপর। অন্যদের কাছ থেকে প্রযুক্তি নিয়ে ব্যবহার করার জন্য নয়। আমরা ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি খাতে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে চাই। আর সেই প্রযুক্তি তৈরি হবে দেশেই। এটা স্বপ্ন নয়, এটাই হবে বাস্তবতা। ভবিষ্যতের বড় বড় প্রযুক্তির কিছু কিছু বাংলাদেশ থেকেই তৈরি হবে। তেমন পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে বাংলাদেশ।”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় এবং জয় ভাইয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে এক দশক ধরে বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরে নেওয়া নানা উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে মানুষ। গত চার বছরে ডিজিটাল অর্থনীতিতে চমকপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করে হুয়াওয়ের ‘গ্লোবাল কানেকটিভিটি ইনডেক্স ২০১৯’-এর ‘টপ মুভার’ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল অর্থনীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
আমাদের বড় সৌভাগ্য যে আমরা একজন তরুণ ও মেধাবী নেতা পেয়েছি, যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন দিয়েছেন, সেখানে সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা ছিল। এর সব রোডম্যাপ, পলিসি, অবকাঠামোয় আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত ছিল বড় টার্নিং পয়েন্ট। এর সুফল আজ আমরা পাচ্ছি। উনার নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৬০০ ধরনের সেবা পাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এটা এখন ডিজিটাল ইকোনমিক হাব হয়েছে, যেটা জয় ভাইয়ের ব্রেনচাইল্ড ছিল। উনার নির্দেশনায় আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং জয় ভাইয়ের বিচক্ষণতায় আমরা আজকে দেশে ডিজিটাল স্মার্টফোন ও ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন করছি, যা আগে প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হতো। উনার আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল ৯৯৯ জরুরি সেবা, যার সুফল পাচ্ছে কোটি মানুষ।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য সরবরাহ, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও ঘরে বসেই বিনোদন—এসব বিষয় কিভাবে চলমান রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা কার্যক্রম শুরু করি। সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী কিন্তু ঘরে বসেই শিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে জরুরি খাদ্য সরবরাহ, এমনকি ঘরে বসে বিনোদন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। আমরা করোনাবিষয়ক তথ্যসেবা, টেলিমেডিসিন সেবা, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা, সেলফ করোনা টেস্টিংসহ অনেক নতুন সেবা যুক্ত করি হেল্প লাইন ৩৩৩ নম্বরে। এ ছাড়া করোনা বিডি অ্যাপ এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ, ‘ভলান্টিয়ার ডক্টরস পুল, বিডি’ অ্যাপ সেলফ টেস্টিং টুল, প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার, ডিজিটাল ক্লাসরুম, ফুড ফর নেশন, এডুকেশন ফর নেশনসহ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম চালু করি।
২০২৫ সালের মধ্যে গ্রামের ১০ কোটি মানুষ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় আসবে। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ২০ লাখ মানুষের। এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। ফলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১ শতাংশের বেশি বাড়বে বলে আশা করছি।
আমরা উদ্ভাবনে জোর দিচ্ছি। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ, মাইক্রোসফটের বিল গেটস, অ্যাপলের স্টিভ জবস কিংবা আলিবাবার জ্যাক মার একটি উদ্যোগ লাখো কোটি তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বাংলাদেশেও পাঠাও কিংবা সহজ কিংবা বিকাশ পাঁচ-সাত বছর আগে একটা ছোট্ট স্টার্টআপ ছিল। তাদের উদ্যোগটি সফল হওয়ার ফলে আজ লাখো তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। সেই উদ্দেশ্য সামনে রেখে আইসিটি বিভাগে ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি (আইডিয়া) স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের তরুণরা যেন চাকরি না খুঁজে চাকরি তারা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করতে চাই। আমাদের তরুণরা শুধু জব সিকার হবে না, জব ক্রিয়েটর হবে। তারা যাতে উদ্যোক্তা হতে পারে সে জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা দরকার। তরুণদের সেই প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে সহায়তা করছে আইসিটি ডিভিশন।
মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা চারটি পিলারকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলছি। তার মধ্যে প্রথম ও প্রধান পিলার হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য আমরা একটা পিরামিড স্ট্রাকচার গড়ে তুলছি, সেখানে পিরামিডের টপে কিছু ইনোভেটর ও ইয়ং এন্টারপ্রেনার থাকবে। কিছুসংখ্যক সফল উদ্যোক্তাই ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। আর দ্বিতীয় ধাপে থাকবে কিছু অ্যাচিভার অর্থাৎ যারা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বিভিন্ন কম্পানিতে জব করবে। তৃতীয় স্তরে থাকবে লাখ লাখ ফ্রিল্যান্সার, যারা কাজ করবে গ্রাম কিংবা শহর থেকে দেশে কিংবা বিদেশে।
আজকে সাউথ কোরিয়া যে রকম দিচ্ছে, জাপান, জার্মানি যে রকম দিচ্ছে, সিলিকন ভ্যালির কথা আমরা যে রকম বলছি, বাংলাদেশের কথা ২০৪১ সালে পুরো বিশ্ব যেন ওইভাবে বলে এবং ইনোভেশনের ওই জায়গায় থাকে সে জন্য আমরা এটাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কেন্দ্র করে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা আমরা কাজে লাগাতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জয় ভাই বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে বাংলাদেশ আগামীর নেতা হতে চলেছে। আমাদের সক্ষমতা আছে। আমরা প্রমাণ করেছি, আমরা তা করতে পারি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কোন প্রযুক্তি আসছে, সেটা তো না জানলে চলছে না। কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করছি, তার কিছু একটা বাংলাদেশ থেকেই আসবে।
তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিগ ডাটা অ্যানালিসিস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লক চেইন, রোবটিকসের মতো প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জনে কাজ শুরু করেছি।
লেখক : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী