করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাত ও অর্থনীতিতে স্বস্তির খবর দিলো ওয়ালটন। ২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালে ১০ গুণ বেশি টেলিভিশন রপ্তানির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি ও রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন।
এ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (জানুয়ারি ১৪) রাজধানীতে ওয়ালটন করপোরেট অফিসে ‘হাইয়েস্ট টেলিভিশন এক্সপোর্ট ইন ২০২০’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যাতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান, গ্রিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশুদ আহমেদ, বাংলাদেশে অবস্থিত ডেনমার্ক দূতাবাসের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রেফিকা হায়াত এবং হেড অব ডেনিশ ট্রেড মিশন আলী মুশতাক বাট।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান এসএম শামছুল আলম, পরিচালক রাইসা সিগমা হিমা ও রিফাহ তাসনিয়া স্বর্ণা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হুমায়ূন কবীর, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের (আইবিইউ) প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম, ওয়ালটন টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক ফিরোজ আলম এবং ইউরোপে ওয়ালটনের হেড অব বিজনেস প্রকৌশলী তাওসিফ আল মাহমুদ।
এদিকে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও সর্বোচ্চ পরিমাণ টিভি রপ্তানির জন্য এক ইমেইল বার্তায় ওয়ালটনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফাহরেনহল্টজ।
বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি। সে লক্ষ্য অর্জনে ওয়ালটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে টেলিভিশন রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা জায়ান্ট হয়ে উঠছি। শুধু টেলিভিশন নয়, ইলেকট্রনিক্স খাতের সব ক্ষেত্রেই আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন চমৎকার কাজ করছে।
অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ওয়ালটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। করোনা মহামারিতেও স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ওয়ালটন দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। আমার বিশ্বাস সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের পণ্য সরবাহের কারণে ওয়ালটন বিশ্বের বিভিন্ন অ লের বাজার ধরতে পেরেছে। ওয়ালটন দেশের জন্য খ্যাতি ও সম্মান বয়ে আনছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ওয়ালটনের প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারাকে যৌবনকাল বলে আখ্যায়িত করেন ওয়ালটন হাই-টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই বিশ্ববাজারে ওয়ালটনের যুগ শুরু হয়েছে। ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতে আমরা বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকা আরো উঁচুতে তুলে ধরে দেশকে সম্মানিত করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে চাই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পখাত হবে বাংলাদেশের শীর্ষ রেমিটেন্স অর্জনকারী খাত।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ওয়ালটন ২০১০ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজস্ব কারখানায় তৈরি টেলিভিশন রপ্তানি করছে। বর্তমানে বিশ্বের ৩৫টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটনের তৈরি টিভি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে জার্মানি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, স্পেনসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশে ১০ গুণ বেশি রপ্তানি হয়েছে ওয়ালটন টেলিভিশন।
ওয়ালটন টিভির সিইও প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের শীর্ষ টিভি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওয়ালটন যুগোপযোগি ডিজাইন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টেলিভিশন উৎপাদন করছে। ওয়ালটন টিভির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও উচ্চমানের প্রতি আতœবিশ্বাস তৈরি হওয়ায় বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে। বিশ্বের সেরা ৫টি টেলিভিশন প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় পৌঁছানোর মিশন নিয়ে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি ২০২৩ সালের মধ্যে ৫টি মহাদেশীয় অ লের সবগুলো দেশে ওয়ালটনের তৈরি টেলিভিশন রপ্তানির টার্গেট নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই রপ্তানির সাফল্য উদযাপন আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত টেলিভিশন ছড়িয়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে মূল্য যুক্ত করার উদ্যোগকে উৎসাহিত করা এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করা।