টানা কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে চীনের পাশাপাশি ভিয়েতনাম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশ্বের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের বিকল্প হিসেবে উৎপাদন লাইন ভিয়েতনামে সরিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগ অভূতপূর্ব বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ফোন ও ল্যাপটপ উৎপাদনে ভিয়েতনাম বৈশ্বিক ভিত্তি হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর ভিয়েতনাম টাইমস।
কয়েক বছর থেকেই ক্যানন, মাইক্রোসফট, নকিয়া, ইন্টেল, এলজি ও বিশেষত স্যামসাংয়ের মতো বৃহৎ প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতারা ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করছে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে অ্যাপলের নাম। ভিয়েতনাম উচ্চপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের জন্য বিশাল ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বিশেষত যখন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো চীনের বাইরে সম্প্রসারণের পথ খুঁজছে, তখন বিকল্প দেশ হিসেবে ভিয়েতনাম অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের যে প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ চেইনে বৈচিত্র্য আনতে চায়, তাদের জন্য ভিয়েতনাম একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও মনে করছে, ভিয়েতনাম চীনের উৎপাদন লাইনের অনুকূল প্রতিস্থাপন হবে। এর আগে নিক্কেই এশিয়ার বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে বিক্রি হওয়া অর্ধেক ল্যাপটপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে উৎপাদিত হবে।
গত ১৮ জানুয়ারি ফক্সকন সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেডকে ফুকং টেকনোলজি কারখানায় ২৭ কোটি ডলার বিনিয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে উত্তর-পূর্ব ভিয়েতনামের ব্যাক গিয়াং প্রদেশ কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো প্রতি বছর অ্যাপলের ৮০ লাখ পণ্যসহ ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ উৎপাদন করা। একই সময়ে প্রদেশটি হংকংয়ের জা সোলার ইনভেস্টমেন্টের আরো তিনটি প্রকল্পে বিনিয়োগের ছাড়পত্র দেয়। বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিকস খাতের এ চারটি নতুন প্রকল্পে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৭ কোটি ডলার।
২০১৭ সাল থেকে হন হাই প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেড বা ফক্সকন টেকনোলজি গ্রুপ ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করে আসছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ গ্রুপের মোট বিনিয়োগ মূলধন ১৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর আগে দেশটির সরকারের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের মাঝামাঝিতে ভিয়েতনামে স্যামসাংয়ের মোট বিনিয়োগ ছিল ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারেরও বেশি। বর্তমানে হ্যানয়ে স্যামসাং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র তৈরি করছে। এ প্রকল্পটি ২০২২ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুতরাং ফাইভজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বিগ ডাটার মতোর উচ্চপ্রযুক্তি খাতে ভিয়েতনামি ইঞ্জিনিয়ারদের গবেষণা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশটিতে একাধিক নতুন প্রকল্প এবং চলমান প্রকল্পগুলো সম্প্রসারণ হচ্ছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ডং নাই প্রদেশও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নতুন বিনিয়োগের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে। এর মধ্যে কোরিয়ার হ্যানসোল টেকনিক্স গ্রুপ দুটি প্রকল্প এবং প্ল্যাটেল কোম্পানির উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। সম্প্রতি ফক্সকনের একটি জরিপ দল থান হোয়া প্রদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবতা যাচাই করেছে। দা নং সিটিতে এলজি ইলেকট্রনিকস ভিয়েতনাম কোং ও লিমিটেড হাই ফং একটি তথ্য প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ফরেন ইনভেস্টমেন্ট এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এনগুয়েন মাই বলেন, ভিয়েতনামে প্রযুক্তি খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের উচ্চ তরঙ্গ আগে থেকেই প্রত্যাশিত ছিল। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে যখন পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ থমকে গিয়েছিল, সে সময় বড় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানিয়েছে ভিয়েতনাম। সরকারের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে সংস্থাগুলো নতুন বিনিয়োগ ও চলমান বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য ভিয়েতনামকে বেছে নিয়েছিল।
ভিয়েতনাম ইলেকট্রনিক এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশনের উপসাধারণ সম্পাদক দো খোয়া তান বলেন, অ্যাপলের পণ্য তৈরি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিয়েতনাম আরো বেশ কয়েকটি উচ্চ প্রযুক্তি সংস্থাগুলোকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। এজন্য এটি বলা যেতে পারে, ভিয়েতনাম ধীরে ধীরে ফোন ও কম্পিউটার উৎপাদনের জন্য বৈশ্বিক ভিত্তি হয়ে উঠছে। বেশির ভাগ বিদেশী বিনিয়োগ হলেও মানব সম্পদগুলো কিন্তু ভিয়েতনামি। আমরা অভিজ্ঞ শ্রমশক্তি পাওয়ার পর ভিয়েতনামে বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পের স্থানান্তর আরো সহজ হবে।