কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী ট্যাবলেট পিসি বাজারের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ট্যাবলেট পিসি সরবরাহ ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারীতে রিমোট ওয়ার্ক ও অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব বাড়তে থাকায় মোবাইল কম্পিউটিং ডিভাইসের চাহিদা বেড়ে যায়। যে কারণে ট্যাবলেট পিসি সরবরাহে টানা তৃতীয় প্রান্তিকের মতো প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর ইটি টেলিকম।
ক্যানালিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালজুড়ে বৈশ্বিক ট্যাবলেট পিসি বাজার ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। এর সুবাদে গত বছর ট্যাবলেট পিসি সরবরাহ ৪৫ কোটি ৮২ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে। ২০১৫ সালের পর গত বছর ট্যাবলেট পিসি সরবরাহ সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
বৈশ্বিক ট্যাবলেট পিসি বাজারের ২০ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে চীনভিত্তিক লেনোভো। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে লেনোভো ব্র্যান্ডের ট্যাবলেট পিসি সরবরাহ ২ কোটি ৮৮ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি।
বৈশ্বিক ট্যাবলেট পিসি বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির ট্যাবলেট পিসি বাজারে প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে আইপ্যাডের চাহিদা ও সরবরাহ বৃদ্ধি। গত বছর চতুর্থ প্রান্তিকে অ্যাপলের ট্যাবলেট পিসি সরবরাহ ২ কোটি ৬৪ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি। এর সুবাদে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বৈশ্বিক ট্যাবলেট পিসি বাজারে অ্যাপলের বাজার দখল ১৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
গত বছর অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বৈশ্বিক ট্যাবলেট পিসি বাজারের শীর্ষ পাঁচ ভেন্ডর তালিকায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে এইচপি, ডেল ও স্যামসাং। গত প্রান্তিকে এ তিন প্রতিষ্ঠানও দুই অংকের সরবরাহ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে।
এইচপি অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১ কোটি ৯৩ লাখ ইউনিট ট্যাবলেট পিসি সরবরাহ করেছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। ডেল সরবরাহ করেছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ইউনিট ট্যাবলেট পিসি, যা এক বছর আগের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে শীর্ষ পাঁচে থাকা স্যামসাং সরবরাহ করেছে ১ কোটি ১৫ লাখ ইউনিট ট্যাবলেট পিসি, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি। গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ট্যাবলেট পিসি সরবরাহে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং।
এ বিষয়ে ক্যানালিসের রিসার্চ ডিরেক্টর রুশাভ দোশি বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে অফিস পরিচালনা এবং শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে দেশগুলোর সরকারকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। অনলাইন শিক্ষা খাতে ট্যাবলেট পিসির চাহিদা আরো কয়েক প্রান্তিক ঊর্ধ্বামুখী থাকবে। লেনোভো ও স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শিক্ষা খাতকে লক্ষ্য করে ট্যাবলেট ডিভাইস উন্মোচনে জোর দিচ্ছে, যা সরবরাহ প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, অ্যাপলের সাম্প্রতিক আইপ্যাড ডিভাইসগুলোতে যুক্ত হয়েছে স্মার্ট কানেক্টর। আইপ্যাড মিনি বাদে বাকি ডিভাইসগুলোয় আলাদা কিবোর্ড যুক্ত করার অপশন রয়েছে। ক্রেতারা বিষয়টি ভালোই পছন্দ করেছে। পাশাপাশি এ ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য অ্যাপল আইপ্যাড ওএস নামে বিশেষায়িত অপারেটিং সিস্টেম এনেছে। এসব কারণেই মূলত ট্যাবলেট ডিভাইসের বাজারে অ্যাপল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে। তাছাড়া অ্যাপলের নতুন ট্যাবলেট ডিভাইসের ডিজাইনকে প্রচলিত পিসি ব্র্যান্ডগুলোর জন্যও হুমকি মনে করা হচ্ছে।
কয়েক বছর আগেও ট্যাবলেট বাজারে চমক দেখিয়েছিল ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। অ্যামাজনের সাশ্রয়ী মূল্যের ফায়ার ট্যাব লুফে নিয়েছে ক্রেতারা। তবে বর্তমানে ট্যাবলেট বাজারে অ্যামাজনের রমরমা আর নেই।
কভিড-১৯ মহামারী স্মরণকালের সংকট তৈরি করেছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিকভাবে ভিন্ন ও মৌলিক কিছু পরিবর্তন এনেছে। এমন পরিবর্তনের অংশ রিমোট ওয়ার্ক সংস্কৃতি ও অনলাইন শিক্ষার প্রচলন। বিশ্বজুড়ে রিমোট ওয়ার্ক ও অনলাইন শিক্ষার ব্যাপক প্রসারে ভর করে গত বছর শুধু ট্যাবলেট পিসি বাজারেই নয়, ল্যাপটপ ডিভাইস বাজার এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত বছরজুড়ে কম্পিউটিং ডিভাইস হিসেবে শুধু ল্যাপটপের সরবরাহ ১৭ কোটি ৩০ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা ২০১৯ সালে সরবরাহকৃত ল্যাপটপের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। ডিভাইস বিক্রিমূল্য বিবেচনায় গত বছর বৈশ্বিক ল্যাপটপ বাজারের আকার ১৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।