বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ ভাতা ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিতরণ আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে।
প্রথম দফায় আজ ছয় জেলার ৬৫৫টি স্কুলের ৮৬ হাজার ৪৫২ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ ভাতা প্রদান করা হয়েছে। চলতি বছর সব মিলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ‘নগদ’-এর মাধ্যমে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে ভাতা ও উপবৃত্তি দেবে, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে বৃত্তি বিতরণে যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘটনা।
সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণের উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, মো. আফজাল হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, বাংলাদেশ ডাক বিভগের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন এবং ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক উপস্থিত ছিলেন।
বিতরণ পদ্ধতির অস্বচ্ছতা ও দীর্ঘসূত্রীতায় প্রায় এক বছর উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণ বন্ধ ছিল। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ ডিসেম্বর ‘নগদ’-এর সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। ‘নগদ’-এর মাধ্যমে বিতরণের ফলে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং সরকারের খরচ এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে।
চুক্তি অনুসারে, শিক্ষার্থী জন্ম সনদ ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ নতুন করে তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করা হয়। ফলে ভাতা বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর অভিভাবতের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে সেটি চলে যাচ্ছে। ভাতার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্যাশ-আউট করার খরচও পেয়ে যাচ্ছেন অভিভাবক। ফলে তাদের বাড়তি কোনো খরচই হবে না।
যথাযথ কাগজপত্র দিয়ে নিবন্ধন করায় শুরুর দিকে কাজটি অনেক কঠিন হলেও ডেটাবেজ তৈরি হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরের শুরুতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। একবার ডেটাবেজে নাম যুক্ত হলে সেটিকে শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যন্ত সরকার ব্যবহার করতে পারবে। সেক্ষেত্রে বছরের শুরুতে শুধু প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নাম যুক্ত হবে। ফলে ভাতা বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণ অনুষ্ঠানে ডিজিটালি যুক্ত হয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের ক্রমবিকাশে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণ প্রকল্পটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবে। আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আপনারা আমাদের ওপর যে আস্থা রেখেছেন ‘নগদ’-এর সেবার মাধ্যমে তার যোগ্য প্রতিদান আমরা দেব। ‘নগদ’ দেশের সর্বকনিষ্ঠ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এটি সবচেয়ে প্রিয় সার্ভিস। সে কারণে তিনি এই সেবাটিকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণের জন্য বেছে নিয়েছেন।”
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, “উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণের কারণেই ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশ কমে গেছে। তবে আগে যে অপারেটরের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করা হচ্ছিল, সেখানে অনেক সুক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে বলে আমরা দেখতে পাই। সে কারণে তাদের বদলে আমরা সরকারের একটি অপারেটরকে বেছে নিয়েছি। একে তো ‘নগদ’ আমাদের ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান, তার ওপরে আমাদের অনেক টাকা খরচ বাঁচবে। সুতরাং ‘নগদ’-কে বেছে না নেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।”
‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক এ বিষয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছি আমরা। ‘নগদ’-এ সব সময়ই গ্রাহককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে, তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী এবং তার মায়েরা পাবেন সর্বাধিক গুরুত্ব। সেবার মাধ্যমে সকলের মন জয় করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমরা।”