পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মাল্টিন্যাশনাল ডেইলি কমিউনিকেশন কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘মটোরোলা’। বেশিরভাগ মানুষই এই কোম্পানিকে চিনে থাকে স্মার্টফোনের জন্য। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে ‘নেইল আমস্ট্রং’ চাদে গিয়ে প্রথম যেই জিনিসটাতে ভিডিও পাঠিয়েছিলেন, সেটা ‘মটোরোলা’র ট্রান্সমিশন ব্যাবহার করেই পাঠিয়েছিলেন। ‘মটোরোলা’ স্মার্টফোনের বাইরেও টেলিকমিউনিকেশন জগৎের আরও বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রেখেছে। কিন্তু, কেউ সফলভাবে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলে বাধা আসবেই। আজ কথা বলবো এই ‘মটোরোলা’ কোম্পানির উথান এবং পতন নিয়ে।
তাহলে দেরী না করে চলুন নিচে গিয়ে দেখে আসা যাক বিস্তারিতঃ⤵
‘মটোরোলা’র যাত্রা শুরু হয় ১৯২৮ সালে। ‘পল গেলভিন’ এবং ‘জোসেফ গেলভিন’, এই দুই ভাই মিলে ৭৫০ ডলারের মাধ্যমে ‘শিকাগো’তে ‘স্টুয়ার্ট ব্যাটারী’ নামে একটি ব্যাংক ড্রাফ্ট কোম্পানি কিনে নেন। তারা তাদের নামানুসারে সেই কোম্পানির নাম রাখেন ‘গেলভিন ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন’। ছোট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে মাত্র পাঁচজন এমপ্লয়ী নিয়ে সেখানকার কাজ শুরু করেন তারা। শুরুতে সেই কোম্পানিতে তৈরি করা হতো ব্যাটারি জাতীয় ডিভাইস।
১৯৩০ সালে ‘রেডিও ম্যানুফ্যাকচারাস এসোসিয়েশন সম্মেলনে’ তাদের তৈরী সেই ব্যাটারির একটি রেডিওর কার্যকরী মডেল প্রদর্শন করা হয়। সেখান থেকে তারা ব্যাটারি চালিত রেডিওর জন্য অনেক অর্ডার নিয়ে আসে। এটাই হচ্ছে তাদের সফলতার প্রথম ধাপ। পল গেলভিন তাদের কোম্পানির জন্য নতুন নাম খুঁজছিলেন। এরপর তার মাথায় ‘মটোরোলা’ নামটি চলে আসে।
১৯৩০ সালের ২৩ জুন প্রথম ‘মটোরোলা’ ব্র্যান্ডের একটি রেডিও বাজারে বিক্রি করা হয়। রেডিওটি মার্কেটে অনেক সাড়া ফেলে। কিছুদিনের মধ্যেই ‘মটোরোলা’ ব্র্যান্ডের নাম আস্তে আস্তে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৩০ সালের নভেম্বর থেকে তারা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর জন্য কার রেডিও রিসিভার সাপ্লাই করা শুরু করে। সেই বছরই মটোরোলা তাদের রিচার্জ এবং ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি রেডিও ট্রান্সসিবার তৈরি করে ‘মটোরোলা’। যেটি যুদ্ধের সময় যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৪৭ সালে ‘মটোরোলা’ তাদের প্রথম টেলিভিশন বের করে। ১৯৫২ সালে ‘মটোরোলা’র রেডিও এবং টেলিভিশন প্রস্তুত করার জন্য কানাডার টরন্টোতে তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক সাবসিটারী চালু করে। ১৯৫৩ সালে আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ‘মটোরোলা’ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫৫ সালে ‘মটোরোলা’ বিশ্বের প্রথম কমার্শিয়াল হাই পাওয়ার ট্রানজিস্টার তৈরি করে। ১৯৫৮ সালে লঞ্চ হওয়া আমেরিকার প্রথম স্যাটেলাইটের রেডিও ইকুইপমেন্ট ‘মটোরোলা’ই সাপ্লাই করে। ১৯৫৯ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে লাইসেন্সিং এবং উৎপাদক পরিচালনার জন্য তারা আরো একটি সাবসিটারি তৈরি করে। এরপর মটোরোলা ব্র্যান্ড আস্তে আস্তে অনেক ধরনের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী তৈরী করতে থাকে।
১৯৬০ সালে বিশ্বের প্রথম ওয়ারলেস টেলিভিশন বাজারে আনে ‘মটোরোলা’। ১৯৬৩ সালে ‘মটোরোলা’ সর্বপ্রথম পিকচার টিউব নিয়ে আসে। পরের বছর ‘মটোরোলা’ আমেরিকার বাইরেও তাদের রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট সেন্টার খুলে। ১৯৬৭ সালে আরও একটি টেলিভিশন বাজারে লঞ্চ করে ‘মটোরোলা’। এই টেলিভিশনর ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন এনে তারা বাজারে ছাড়ে। আর এই ডিজাইনিং টিভি অনেকের চোখে পড়ে পছন্দ হওয়া শুরু করে।
১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো ‘নেইল আর্মস্ট্রং’ চাঁদে আহরণের পর মটোরোলার ট্রান্সসিবার দিয়েই ভিডিও করেন। ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে ‘মটোরোলা’ প্রথম হাতে বহনযোগ্য মোবাইল ফোন তৈরি করে।
এরপর আস্ত আস্তে তারা তাদের সামগ্রীগুলো আপগ্রেড করা শুরু করে এবং সেগুলো বাজারে ছাড়ে।
১৯৯৪ সালে ‘মটোরোলা’ প্রথম ডিজিটাল কমার্শিয়াল রেডিও সিস্টেম চালু করে। ৯০ এর শেষের দিকে ‘মটোরোলা’ তাদের সেলফোন তৈরির দিকে নজর দিতে থাকে। এরপর ২০০০ সালের আগস্টে বিশ্বের প্রথম জিপিআরএস সেলফোন বাজারে নিয়ে আসে ‘মটোরোলা’। ২০০৩ সালে একটি মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে আনে ‘মটোরোলা’। ২০০৪ সালে ‘মটোরোলা’ আলাদা একটি কোম্পানি গঠন করে। সে বছরই তারা তাদের নতুন আরেকটি ফোন বাজারে লঞ্চ করে। যেটির মডেলের নাম ছিলো ‘রেজর’। এই ফোনটির ডিজাইন এবং স্পেসিফিকেশন দেখে ক্রেতারা মুগ্ধ হয়। ‘মটোরোলা’র এই সাফল্য ছিলো অনেক অগ্রগামী। কিন্তু, ২০০৫ সাল থেকে স্মার্টফোনের যুগ শুরু হওয়ার পর থেকেই পিছিয়ে যেতে শুরু করে তারা। এরপর শুরু হয় তাদের ক্ষতির আগমন।
২০১১ সালে ‘মটোরোলা’ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। এরপর তারাও তাদের ভালো ভালো কিছু স্মার্টফোন বাজারে লঞ্চ করা শুরু করে। কিন্তু, এরপরও তাদের আগের অবস্থানে তারা ফিরতে পারছিলো না। বর্তমানে ‘মটোরোলা’ আরও কিছু ভালো মানের স্মার্টফোন তৈরী করে বাজারে লঞ্চ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেখা যাক, এক্ষেত্রে তারা আশেপাশের ব্র্যান্ডগুলোকে কতটা পিছনে ফেলতে পারে।