ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, মোবাইলের গ্রাহকদের কাছে টেলিকম কোম্পানিগুলো থেকে পাঠানো এসএমএস বাংলায় দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ইতোমধ্যে। এবার বাংলায় এসএমএস পাঠানোর চার্জ কমিয়ে অর্ধেক করার কথা জানালেন তিনি। মোস্তাফা জব্বার জানান, ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকে বাংলায় এসএমএস চার্জ ২৫ পয়সা করা হবে।
আজ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ‘প্রযুক্তিতে বাংলা চাওয়া, পাওয়া ও আকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক এক অনলাইন সভায় এ কথা জানান। দেশের প্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি) আয়োজন করে ওই অনলাইন ওয়েবিনিয়ারের।
https://www.facebook.com/Techzoom.TV/videos/244885890627910
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকে বাংলা ভাষায় এসএমএস চার্জ কমিয়ে অর্ধেকে নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, সর্বস্তরে বাংলা ও প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার বাড়াতে এবং সমৃদ্ধ করতে ২১ ফেব্রেুয়ারির প্রথম প্রহর থেকে বাংলায় এসএমএস চার্জ ২৫ পয়সা করেছে সরকার। আজ (শনিবার) রাত থেকেই এই চার্জ কার্যকর হবে।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধিতে কয়েক বছর থেকেই কাজ করছি। প্রযুক্তির এই সময়ে যদি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে বাংলাকে সমৃদ্ধ করতে না পারি তাহলে পিছিয়ে যাব। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। একটা সময় যেখানে বাংলায় কোনো কনটেন্ট ওয়েবে খুঁজতে গেলে ঘাম ছুটত, এখন আর তা হয় না।
ওয়েবিনারে ‘কি-নোট’ উপস্থাপন করেন এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল মেম্বার সুমন আহম্মেদ সাবির। ‘প্রযুক্তিতে বাংলা: চাওয়া, পাওয়া ও আকাঙ্ক্ষা’ শিরোনামের কি-নোটে তিনি দেশে প্রযুক্তি খাতে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করেন।
বক্তব্যের শুরুতেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টিএমজিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের একটা আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা উচিত ছিল বাণিজ্য সংগঠন ও সরকারে বিভিন্ন সংস্থার। কিন্তু তারা পারেনি। আজ টিএমজিবির মতো সংগঠন এমন আয়োজন করেছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে ভাষার জন্য কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার নজির একমাত্র বাংলাদেশেরই আছে। আর এ জন্যই ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয় আমাদের।
মন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে। তাই বাংলা নিয়ে বিশেষ করে প্রযুক্তিতে বাংলা নিয়ে আমার আকাঙ্ক্ষাও অনেক বেশি। সেটা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এখন দেখতে পাই, আমরা আসলে অনেক দূর এগিয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো দুর্বলতা আছে, সেটাও কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার চায়, প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাটাকেও মানসম্মত পর্যায়ে নিয়ে যেতে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে।
এ জন্য বাংলায় কনটেন্ট তৈরির উপর জোর দেন এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। বলেন, আমরা তখনই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো যখন আমরা বাংলায় কনটেন্ট সমৃদ্ধ করতে পারবো। এটা শুধু ইউটিউব বা ফেইসবুকে নয়, এটা সবধরনের কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে।
বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ থেকে কয়েক বছর আগে ৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রকল্পটির কাজ নিয়ে নানা ধরনের জিজ্ঞাসা সাংবাদিকদের রয়েছে জানিয়ে বলেন, প্রকল্পটির কাজ চলছে। আমরা আশা করবো প্রকল্পটির কাজ আরও দ্রুততার সঙ্গে করতে সংশ্লিষ্টরা জোর দেবেন।
বর্তমান প্রজন্মের রোমান হরফে বাংলা লেখার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী জব্বার বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম রোমানে বাংলা লেখায় ঝোঁকার অন্যতম কারণ হলো স্কুল পর্যায়ে টাইপিং শেখানোর অভাব। যেটা অনেক দেশেই আছে। আমাদের যদি স্কুল পর্যায়ে বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় আলাদা টাইপিং শেখানো যেত তাহলে এমনটা হতো না।
এজন্য অবশ্য তিনি অবকাঠামো সুবিধার অভাবের কথা তুলে ধরে তা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
দেশে ডটবাংলা ডোমেইন জনপ্রিয় হয়নি। এর নিবন্ধন ফি আড়াই হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৮০০ টাকা করা হলেও অনেকেই অনাগ্রহের কথা বলেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর অন্যতম কারণ দেশে বাংলা কনটেন্টের অভাব। সঙ্গে যারা ওয়েবসাইট তৈরি করে তারাও বাংলায় সেটি করতে আগ্রহী হন না বলেই অনাগ্রহ বেশি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই বাংলা নিয়ে কাজ করছি। দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিতে বাংলার সমৃদ্ধিতে কাজ রছে। তবে আমার মনে হয় এটা এখনো খুব বেশি দূর এগোতে পারিনি। এই কাজকে আরও ত্বরানিত করতে হবে। আর কনটেন্ট লেখার খ্ষেত্রে অবশ্যই প্রমিত বাংলার ব্যবহার করতে হবে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি শহীদ উল মুনির বলেন, আমরা বাংলা নিয়ে হার্ডওয়্যার ক্ষেত্রে এগিয়েছি বলা যায়। তবে এটা আরও বেশি হওয়া দরকার।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হক বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত শুধু ফেব্রুয়ারি হলেই বাংলা নিয়ে কথা হয়। কিন্তু আমার মনে হয় এটা সারাবছরই হওয়া দরকার। প্রযুক্তিতে বাংলাকে এগিয়ে নিতে হলে এটা করতেই হবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)-এর সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন,
বাক্কো’র সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলা শুধু কাজ করতে হবে বলে করলে হবে না। প্রযুক্তিতে বাংলাকে সমৃদ্ধ করতে হলে অবশ্যই সেটা ভালোবাসা থেকে করতে হবে।
সোনিয়া বশির কবির বলেন, আমার মূল আকাঙ্ক্ষা আমরা আমাদের ভাষায় কথা বলল, কিন্তু যে যে ভাষায় শুনতে চায় সেটা যদি করা সম্ভব হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকার হবে। তাহলে বিশ্বে আমাদের উদ্যোক্তা ও তরুণরা আর কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে থাকবে না।
টিএমজিবির আহ্বায়ক মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিক্যাবের সভাপতি পান্থ রহমান। এছাড়া টেলিকম এবং প্রযুক্তি অঙ্গনের শীর্ষ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।