অ্যাপল ইনকরপোরেশন আইফোনের নির্মাতা হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এছাড়া অ্যাপল ওয়াচ, আইপ্যাড, আইপড, অ্যাপলটিভি, আইওএস, ম্যাকওএস, হোমপডের মতো ডিভাইস ও নানা সেবা দিয়ে বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে দৃঢ় অবস্থান সৃষ্টি করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। শুধু হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সেবা খাতে নয়; আরো একটি ক্ষেত্রে সেরাদের সেরা অ্যাপল। আর তা হলো অধিগ্রহণ। গত ছয় বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০০ কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ প্রতি তিন থেকে চার সপ্তাহ অন্তর একটি করে কোম্পানি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত মঙ্গলবার অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক এসব তথ্য প্রকাশ করেন। খবর বিবিসি।
অ্যাপলের শেয়ারধারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনে টিম কুক বলেন, বিভিন্ন খাতের মতো তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বৃহৎ জায়ান্টদের দ্বারা তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিগ্রহণের সংস্কৃতি নতুন কিছু নয়। হরহামেশাই এ ধরনের অধিগ্রহণ সংঘটিত হয়ে থাকে। আমাদের অধিগ্রহণগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রযুক্তি অর্জনের পাশাপাশি মেধাবীদের খুঁজে বের করা।
তিনি বলেন, গত এক দশকের মধ্যে অ্যাপলের সবচেয়ে বড় অধিগ্রহণ ছিল বিটস ইলেকট্রনিকসের নিয়ন্ত্রণ নেয়া। একজন খ্যাতনামা রেপার এবং প্রযোজক প্রতিষ্ঠিত হেডফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি অধিগ্রহণে ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিল অ্যাপল। ২০১৮ সালে ৪০ কোটি ডলারে মিউজিক রিকগনিশন সফটওয়্যার কোম্পানি শেজামের নিয়ন্ত্রণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি, যা ছিল অ্যাপলের আরেকটি বৃহৎ অধিগ্রহণ। সাধারণত ছোট ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি কোম্পানি অধিগ্রহণ করে থাকে অ্যাপল এবং অধীকৃত কোম্পানির প্রযুক্তি ও লোকবল নিজেদের পণ্যের মান উন্নয়নে কাজে লাগানো হয়। ইসরায়েলভিত্তিক প্রাইমসেন্স থ্রিডি সেন্সিং কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছিল অ্যাপল। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটির প্রযুক্তি অ্যাপলের ফেসআইডি প্রযুক্তি উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন অ্যাপলের অধিগ্রহণ এবং বিনিয়োগে অনেক বৈচিত্র্য এসেছে। গত কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটি একাধিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ইভেন্ট কোম্পানি, পেমেন্ট স্টার্টআপ ও পডকাস্ট ব্যবসাও অধিগ্রহণ করতে দেখা গেছে। ২০১৯ সালে সেলফ-ড্রাইভিং শাটল ফার্ম ‘ড্রাইভ ডটএআই’ অধিগ্রহণ করেছিল অ্যাপল। এ অধিগ্রহণের উদ্দেশ্য ছিল সেলফ-ড্রাইভিং প্রযুক্তি খাতে নিজেদের কার্যক্রম বাড়ানো। এছাড়াও ২০১৬ সালে চীনভিত্তিক রাইডশেয়ারিং কোম্পানি দিদি চুশিংয়ের ১০০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার ক্রয় করে অ্যাপল। যদিও দিদি চুশিংয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে কোনো নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যবসায় পরিধি এবং দক্ষ কর্মী বাড়াতে অধিগ্রহণ প্রবণতা বেড়েছে। অ্যাপল তাদের বিভিন্ন প্রযুক্তি স্টার্টআপ অধিগ্রহণের তথ্য নিয়মিত ঘোষণা দেয় না। মেধাবী প্রযুক্তি কর্মকর্তা খুঁজে বের করা এবং মেধা সম্পত্তি অর্জনে ছোট ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি স্টার্টআপ অধিগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি।
গত ছয় বছরে অ্যাপল যেসব অধিগ্রহণ করেছে, তা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে অধিগ্রহণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে অ্যাপল। এর আর্থিক সক্ষমতারও বহিঃপ্রকাশ এসব অধিগ্রহণ। সম্প্রতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক খতিয়ান প্রকাশ করেছে অ্যাপল। এতে দেখা যায়, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ১১ হাজার ১৪০ কোটি ডলার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
শুধু তা-ই নয়, নগদ মজুদ অর্থের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। যে কারণে ২০১৯ সালের মে মাসে কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং কর বাবদ পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৩৫ হাজার কোটি ডলার অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ওই সময় টিম কুক জানিয়েছিলেন, টেক্সাসের অস্টিনে নতুন ১০০ কোটি ডলারের ক্যাম্পাসে বিনিয়োগ সম্পন্ন করার পর অন্য কোনো লক্ষ্য বাস্তবায়নে মনোযোগ দেবে এবং বিনিয়োগ করবে অ্যাপল। এর পরও নগদ অর্থ মজুদ থাকলে তা বিনিয়োগের লক্ষ্য ঠিক করা হবে। কৌশলগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং আমাদের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবকিছুই আমরা কিনতে চাই। মূলত প্রতিষ্ঠানকে আরো সমৃদ্ধিশালী করার লক্ষ্য থেকে অধিগ্রহণ করা হয়। যে কারণে প্রতি তিন থেকে চার সপ্তাহে গড়ে অন্তত একটি কোম্পানি অধিগ্রহণ করা হয়।